নয়াদিল্লি: দেশের অন্যতম বৃহৎ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (Tata Consultancy Services বা TCS)-এর তরফে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের (TCS Layoff Notice) সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যেই সংস্থার একাংশ কর্মীর কাছে ‘ছাঁটাইয়ের মেইল’ পৌঁছে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক টিসিএস-কে তলব করেছে।
এই ব্যাপারে শ্রম মন্ত্রকের তরফে একটি অফিসিয়াল নোটিস পাঠানো হয়েছে সংস্থাকে, যেখানে স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে— হঠাৎ এই বিপুল ছাঁটাইয়ের কারণ এবং সংস্থার বর্তমান কর্মসংস্থান পরিস্থিতি।
ন্যাসসেন্ট ইনফরমেশন টেকনোলজি এমপ্লোয়িজ সেনেট (NITES) নামক একটি সংগঠনের তরফে সরকারি দফতরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট হরপ্রীত সিং সালুজা জানিয়েছেন, ‘‘টিসিএস সংস্থার বহু কর্মীর কাছে ছাঁটাই সংক্রান্ত ইমেল পাঠানো হয়েছে। সংস্থা কোনও আগাম নোটিস না দিয়েই হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও ধরনের তথ্য না দিয়ে সরাসরি কর্মীদের বরখাস্ত করা হয়েছে।’’
তিনি আরও বলেন, “এই গণছাঁটাইয়ের ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে চলেছে মধ্য ও সিনিয়র লেভেলের কর্মীদের উপর, যারা ১০ থেকে ২০ বছর ধরে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।”
এই ঘটনার জেরে যখন চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ, তখন টিসিএস-এর চিফ অপারেটিং অফিসার কে কীর্থিভাসন জানিয়েছেন, “ছাঁটাই পর্বে এমনভাবে পদক্ষেপ করা হবে যাতে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।”
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, “এই ছাঁটাইয়ের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) বৃদ্ধির কোনও যোগ নেই। বরং যেসব কর্মীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে, তাদের সংস্থার অন্য কোনও বিভাগে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা চলছে। সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যেক কর্মীর সঙ্গে আলাদা করে যোগাযোগ করা হবে এবং তাদের পুনর্নিয়োগের সম্ভাবনাও দেখা হবে।”
শুধু গণছাঁটাই নয়, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও বিলম্ব দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে শ্রম মন্ত্রক। অনেক ক্ষেত্রে ক্যম্পাস রিক্রুটমেন্ট হলেও নিয়োগপত্র হাতে পেলেও জয়েনিং ডেট বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্র স্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছে— ঠিক কতজনকে এখনো কাজে নিযুক্ত করা হয়নি, এবং কবে নাগাদ সেই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের আইটি সেক্টরের বর্তমান পরিসরে এত বড়ো সংখ্যায় কর্মী ছাঁটাই প্রভাব ফেলবে ইন্ডাস্ট্রি ও সমাজ উভয়ের উপরই। বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, অটোমেশন এবং প্রজেক্টের ঘাটতি— এই তিন কারণকে অনেকে দায়ী করছেন এই গণছাঁটাইয়ের জন্য। সরকারি হস্তক্ষেপে এবার টিসিএস কী উত্তর দেয়, এখন সেটাই দেখার বিষয়।