বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও বহু বছর ধরেই ভারতে বসবাস করছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সাহসী মতবাদ, নারীবাদী অবস্থান এবং ধর্মীয় কট্টরতার বিরুদ্ধে ধারালো লেখনীর জন্য বহু বাঙালির প্রিয় হলেও, বৃহস্পতিবার তাঁর একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্ট ঘিরে তৈরি হয়েছে উৎকণ্ঠা ও আলোড়ন। পোস্টে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন—৭০ বছরের বেশি তাঁর বেঁচে থাকা “সম্ভব নয়”। স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ ছড়িয়েছে অনুরাগীদের মধ্যে; অন্যদিকে কিছু মহল শুরু করেছে কটূক্তি ও ট্রোল।
‘আর বড়জোর ৭ বছর’—স্বাস্থ্য নিয়ে তসলিমার উদ্বেগ
ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে তসলিমা লিখেছেন, “আমি এখন ৬৩। খুব স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে জীবন কাটিয়েও, খুব বেশি যদি বাঁচি, বড়জোর আর ৭ বছর বাঁচবো।” সঙ্গে তিনি আরও জানান, ৭০-এর বেশি বয়সে বাঁচার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করেন তিনি। কারণ হিসেবে সামনে আনছেন বংশগত সমস্যা এবং এক চিকিৎসকের ‘গুরুতর ভুল চিকিৎসা’। তাঁর কথায়, “এক ডাক্তার নামের ক্রিমিনালের আমাকে মিথ্যে কথা বলে বোকা বানানো এবং আমার শরীরের প্রচণ্ড ক্ষতি করা—এটাই মূল কারণ।”
ভক্তদের প্রতিক্রিয়া—উদ্বেগ, সমর্থন, আবেগের ঢেউ Taslima Nasrin health post
পোস্টটি প্রকাশের পর বহু অনুরাগী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কেউ লিখেছেন, “আপনিও বেঁচে থাকুন সুস্থ সবল ভাবে, নতুন নতুন সৃষ্টি নিয়ে।”
আরেকজন মন্তব্য করেন, “আপনি যত বেশি দিন বাঁচবেন, ততদিন পৃথিবীতে নতুন তসলিমা তৈরি হবে। নাস্তিক সমাজ, নারীর মুক্তি—সব কিছুর জন্য আপনার মতো মানুষের প্রয়োজন।” তাদের মতে, তসলিমা আর শুধু ব্যক্তি নন—তিনি এক “প্রতিষ্ঠান”, মুক্তচিন্তার প্রতীক।
ট্রোলিংও থামেনি
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমান্তরালভাবে চলেছে ট্রোলিং। নারী নিপীড়ন, ধর্মীয় রক্ষণশীলতা এবং ইসলামপন্থী কট্টর মতাদর্শের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধীদের নিশানায় তসলিমা। নতুন পোস্টটিও সেই আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি।
বিতাড়ন থেকে নির্বাসিত জীবন—তবু থামেনি আওয়াজ
১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। কারণ—নারীর অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা, নাস্তিক্যবাদ এবং ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র লেখা। তাঁর বই ‘লজ্জা’ সহ একাধিক লেখা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছিল ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা’ সৃষ্টির অভিযোগে। নির্বাসনের পরেও থামেনি তাঁর কলম কিংবা সোচ্চার অবস্থান।
বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করলেও, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি, ধর্মের নামে সহিংসতা, নারীর উপর নির্যাতন—সব কিছু নিয়েই নিয়মিত সোচ্চার হন তিনি। তাঁর লেখা বিশ্বের নানা প্রান্তে আলোচনার জন্ম দেয়, সমর্থন ও বিরোধ—দু’টিই টেনে আনে সমানভাবে।
তসলিমার সাম্প্রতিক পোস্ট শুধু উদ্বেগই তৈরি করেনি, বরং আলোচনায় ফিরিয়েছে তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে চলা লড়াইকে। অনুরাগীদের প্রত্যাশা একটাই—সাহসী কলমের এই লেখিকা যেন আরও বহু বছর সুস্থ থাকেন, এবং তাঁর লেখনী যেন আরও অনেককে চিন্তার স্বাধীনতার পথে অনুপ্রাণিত করে।
