মুসলমানরা এত খারাপ কেন, প্রশ্ন তসলিমার

তসলিমা নাসরিন, যিনি বরাবরই তাঁর মুক্তচিন্তা ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত, সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি সরাসরি…

Taslima Nasrin Criticizes Muslim Behavio

short-samachar

তসলিমা নাসরিন, যিনি বরাবরই তাঁর মুক্তচিন্তা ও বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য পরিচিত, সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট করে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সেই পোস্টে তিনি সরাসরি মুসলমানদের উদ্দেশে কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং তাদের আচরণ ও মানসিকতাকে আক্রমণ করে নানা প্রশ্ন তুলেছেন।

   

রেস্তোরাঁ হামলার অভিযোগ
তসলিমার দাবি, বাংলাদেশে কিছু রেস্তোরাঁয় গরুর মাংস বিক্রি হয় না বলে সেগুলোতে জিহাদিরা হামলা চালাচ্ছে। বিশেষ করে যদি সেই রেস্তোরাঁর মালিক হিন্দু হন, তবে সেই হামলার মাত্রা আরও বাড়ে। তিনি বলেন, “মুসলমানের দেশে নাকি গরুর মাংস বিক্রি করতেই হবে। যদি রেস্তোরাঁ হিন্দুর হয়, তাহলে তাদের ওপর হামলা-হুমকি চতুর্গুণ বেড়ে যায়। হিন্দুদের তাদের নিজ দেশে টিকে থাকার জন্য কতটা সহ্য করতে হবে?”

তসলিমা আরও অভিযোগ করেছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দু বিদ্বেষ একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তা রোধে কোনও পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। তার ভাষায়, “হিন্দুবিদ্বেষী জিহাদিগুলো যেভাবে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে, তা কি দেখছে না ইউনুস সরকার? কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? অবশ্যই না।”

রমনা কালিবাড়ির ঘটনা
তসলিমা নাসরিন আরও উল্লেখ করেছেন রমনা কালিবাড়ির একটি ঘটনাকে। সেখানে একটি গাছে মাইক বেঁধে ইসলামিক দোয়া ও দরুদ প্রচার করা হচ্ছিল। তার দাবি, “কাছে কোনও মসজিদ নেই, ওয়াজ মাহফিলও হচ্ছে না। এর উদ্দেশ্য একটাই—হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা এবং তাদের আতঙ্কিত রাখা।”

সমাজের মূল্যবোধ নিয়ে প্রশ্ন
তসলিমা মুসলমান সমাজের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “মুসলমানরা এত খারাপ কেন? নমোশূদ্র এদের পূর্বপুরুষ, কিন্তু তারা বিশ্বাস করে আরব দেশের নবী এদের পূর্বপুরুষ। বাস্তবকে অস্বীকার করে জীবনভর কল্পনায় বাস করা এই জাতটা খুব হিংস্র, খুব ঘৃণ্য মানসিকতা সম্পন্ন।”

তিনি আরও দাবি করেন যে, অধিকাংশ মুসলমান মানবিকতা, উদারতা, সহিষ্ণুতা এখনও শেখেনি। তার ভাষায়, “আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, বাংলাদেশের অধিকাংশ মুসলমান এসবের সামান্য কিছু আজ অবধি শেখেনি।”

প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক
তসলিমার এই পোস্ট প্রকাশ্যে আসার পর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকে তার বক্তব্যকে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। আবার কেউ কেউ তার সমালোচনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলছেন যে, তসলিমা যা লিখেছেন, তা হিন্দুদের প্রতি বিদ্বেষের বাস্তব উদাহরণ।

তবে তার সমালোচনার ভাষা ও স্বর নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। একদল মনে করেন, তিনি সাধারণ মুসলমানদের প্রতি অযৌক্তিক আক্রমণ করছেন, যা সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।

সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
তসলিমা তার লেখায় বারবার সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন রোধে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

তসলিমা নাসরিনের এই বিতর্কিত পোস্ট একদিকে যেমন মুসলমান সমাজের একাংশকে ক্ষুব্ধ করেছে, তেমনই অন্যদিকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তার বক্তব্য কিছুটা সাড়া ফেলেছে। তবে তার বক্তব্য কতটা ন্যায্য বা কতটা উদ্দেশ্যমূলক, তা নিয়ে বিতর্ক থেমে নেই।

তসলিমার মতো লেখকরা বরাবরই সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। তবে এই প্রক্রিয়ায় তাদের বক্তব্যের ভাষা বা উপস্থাপন কতটা ভারসাম্যপূর্ণ, তা নিয়ে সবসময় প্রশ্ন থেকে যায়।