তসলিমা নাসরিনের নিশানায় ভারত সরকার

বিশিষ্ট লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) একবার আবার বিতর্কের কেন্দ্রে। এবার তার নিশানায় ভারত সরকার। সম্প্রতি তসলিমা শত্রু সম্পত্তি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা…

Taslima Nasrin Criticizes

বিশিষ্ট লেখিকা তসলিমা নাসরিন (Taslima Nasrin) একবার আবার বিতর্কের কেন্দ্রে। এবার তার নিশানায় ভারত সরকার। সম্প্রতি তসলিমা শত্রু সম্পত্তি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সমালোচনা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় যেসব মানুষ তাদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের সম্পত্তিকে “শত্রু সম্পত্তি” নামে অভিহিত করা ঐতিহাসিকভাবে ভুল এবং মানবিকতার প্রতি অবমাননা।

দেশভাগের যন্ত্রণা: শত্রু সম্পত্তির উত্থান
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে কোটি কোটি মানুষকে নিজের দেশ, ভিটেমাটি, এবং সম্পত্তি ছেড়ে পাড়ি জমাতে হয়েছিল অন্য দেশে। মুসলমানরা পাকিস্তানে, আর হিন্দু ও শিখরা ভারতে আশ্রয় নেয়। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানে ৭০-৮০ লক্ষ মুসলমান এবং পূর্ব পাকিস্তানে ৫-৬ লক্ষ বাঙালি মুসলমান গিয়েছিল। অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ২০-৩০ লক্ষ বাঙালি হিন্দু ভারতে এবং পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৬০-৭০ লক্ষ অবাঙালি হিন্দু ও শিখ ভারতে চলে আসে।

   

তবে, যারা নিজেদের সম্পত্তি বিক্রি বা বিনিময় করার সুযোগ পাননি, তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তি দুই দেশেই “শত্রু সম্পত্তি” বলে চিহ্নিত করা হয়। ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ, যারা কোনোভাবেই শত্রু ছিল না।

বাংলাদেশের উদাহরণ
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশে পরিণত হয়। স্বাধীনতার তিন বছর পর, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার শত্রু সম্পত্তি আইনটি সংশোধন করে এর নাম রাখে “অর্পিত সম্পত্তি”। তাদের যুক্তি ছিল, যারা দেশ ছেড়েছে তারা শত্রু  নয়। বরং তারা রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির শিকার।

তসলিমা নাসরিন এই প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “বাংলাদেশ যেমন এই ভুল সংশোধন করেছে, ভারত এবং পাকিস্তানেরও তা করা উচিত। শত্রু সম্পত্তি শব্দবন্ধটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক অন্যায়কেই বহাল রাখে না, বরং সাধারণ মানুষের প্রতি অসম্মানও করে।”

ভারত ও পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা
তসলিমার অভিযোগ, ভারত এবং পাকিস্তান সরকার এখনও শত্রু সম্পত্তি আইন পরিবর্তন করেনি। ফলে, দেশভাগের শিকার হওয়া মানুষের প্রতি অবিচার চলতেই আছে। তার মতে, দেশভাগ ছিল রাজনীতিকদের পরিকল্পনা, সাধারণ মানুষ তার বলি হয়েছিল। কিন্তু তাদের ফেলে যাওয়া সম্পত্তিকে “শত্রু সম্পত্তি” নামে অভিহিত করা মানবিকতার পরিপন্থী।

তিনি বলেন, “যারা জন্মভূমি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল, তারা কোনোভাবেই তাদের নিজের দেশের শত্রু ছিল না। অথচ তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে অন্যায় করা হয়েছে।”

তসলিমার আবেদন
তসলিমা নাসরিন ভারত ও পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “শত্রু সম্পত্তি” শব্দটি বাদ দিয়ে “অর্পিত সম্পত্তি” শব্দবন্ধটি গ্রহণ করা উচিত। এটি শুধু নাম পরিবর্তন নয়, বরং ঐতিহাসিক ভুলের সংশোধন এবং দেশভাগের শিকার হওয়া মানুষদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

তিনি আরও বলেন, “যে সাধারণ মানুষ দেশভাগের শিকার হয়ে সম্পত্তি হারিয়েছেন, তাদের প্রতি ন্যূনতম সম্মান প্রদর্শন করা সরকারের দায়িত্ব। বাংলাদেশ যেমন এই পদক্ষেপ নিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানেরও উচিত সেই পথে হাঁটা।”

বিতর্কের নতুন অধ্যায়
তসলিমার এই মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন, আবার কেউ এটিকে অযাচিত সমালোচনা হিসেবে দেখছেন। তবে, শত্রু সম্পত্তি আইন নিয়ে তার এই মন্তব্য দেশভাগের যন্ত্রণার ইতিহাস এবং মানবিকতার প্রসঙ্গকে নতুন করে সামনে এনেছে। তসলিমার মতে, “শত্রু সম্পত্তি নামটি শুধু ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায়কে বাঁচিয়ে রাখে। এটি মুছে ফেলা সময়ের দাবি। মানবিকতার জয় হোক।”