বাঙালি অকৃতজ্ঞ, দাবি তসলিমার

বিখ্যাত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে আবারও বাঙালিদের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি এক আবেগঘন পোস্টে বাঙালিদের অকৃতজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন এবং নিজের…

Taslima Nasrin

short-samachar

বিখ্যাত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে আবারও বাঙালিদের প্রতি ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি এক আবেগঘন পোস্টে বাঙালিদের অকৃতজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন এবং নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন।

   

তসলিমা লিখেছেন, “হয়েছে, অনেক হয়েছে। ৫০টার চেয়েও বেশি বই লিখেছি অকৃতজ্ঞ বাঙালির জন্য, যে বাঙালি আমাকে এক ইঞ্চি মাটি দেয়নি দাঁড়াবার। এই অকৃতজ্ঞ বাঙালি আমার নিজের দেশে আমাকে বাস করতে দেয়নি। নিরন্তর নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে আমার অস্তিত্ব।”

তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি বাঙালি সমাজ এবং তার আচরণে গভীরভাবে মর্মাহত। তসলিমা নাসরিন বহুবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেছেন, বিশেষত তাঁর লেখনীর কারণে। নারী অধিকার, ধর্মীয় কুসংস্কার এবং সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে লিখতে গিয়ে তিনি নিজ দেশ বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছেন। এর পর থেকে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেছেন, কিন্তু কখনোই নিজ মাতৃভূমিতে ফিরতে পারেননি।

তসলিমার তিক্ত অভিজ্ঞতা
তসলিমা আরও লেখেন, “এদের জন্য ভেবে মরে গেলেও, এদের কষ্ট নিবারণ করতে চাইলেও, এদের সুখ-শান্তির জন্য দিন-রাত না ঘুমিয়ে কাটালেও এদের কিছু যায় আসে না। এরা আমাকে গালি দেবেই, এরা আমাকে অপমান অপদস্থ করবেই, এরা আমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবেই, অবজ্ঞা করবেই, উপেক্ষা করবেই।”

তাঁর এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, তিনি শুধুমাত্র নিজের দেশেই নয়, প্রবাসে বসবাস করার সময়েও সমানভাবে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। তাঁর বইগুলো যেখানে নারীর অধিকারের পক্ষে কথা বলেছে এবং সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেছে, সেখানে সেই লেখা তাঁর বিরুদ্ধে তীর হয়ে ফিরে এসেছে।

৩০ বছরের নির্বাসন
তসলিমা নাসরিন প্রায় ৩০ বছর ধরে নির্বাসনে রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, “দেখা হলো তো ৩০ বছর! এখন থেকে, যতদিন বাঁচি, বই পড়বো, গান শুনবো, নাটক সিনেমা দেখবো, ভ্রমণ করবো, আর আকাশ দেখবো।” এই কথাগুলো থেকে বোঝা যায়, তিনি এখন নিজের জীবনকে নতুনভাবে দেখতে চান এবং আত্মমগ্নতার মধ্যে সময় কাটাতে চান।

সমালোচনা ও সমর্থন
তসলিমার এই পোস্ট ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলছেন, তসলিমার মতো একজন সাহিত্যিককে তাঁর নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত করা লজ্জাজনক। আবার অনেকেই বলছেন, তসলিমার কথাগুলো সবসময়ই বিতর্ক তৈরি করার উদ্দেশ্যে বলা হয়।
তাঁর সমর্থকদের মতে, তসলিমা সবসময় সমাজের দুর্বল দিকগুলো নিয়ে কথা বলেছেন, যা অধিকাংশ মানুষ সহজে মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে, সমালোচকরা মনে করেন, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বিতর্ক তৈরি করেন এবং সমাজের সঙ্গে নিজেকে আলাদা করে রাখেন।

বাংলাদেশের সাহিত্যিক মহলে প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশের সাহিত্যিক মহলেও তসলিমার এই মন্তব্য নিয়ে আলোচনা চলছে। কেউ কেউ মনে করেন, তসলিমার বক্তব্য বাস্তবতা থেকে অনেকটা দূরে এবং তিনি নিজেকে বাঙালি সমাজ থেকে আলাদা করে দেখেন। আবার কেউ কেউ তাঁর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেন এবং মনে করেন, তাঁর লেখনী বাঙালিদের চিন্তার প্রসার ঘটিয়েছে।

তসলিমা নাসরিনের এই পোস্ট তাঁর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ এবং বেদনারই বহিঃপ্রকাশ। তিনি সাহিত্যিক হিসেবে বাঙালির জন্য অনেক কিছু করেছেন, কিন্তু সেই সমাজের কাছ থেকে তিনি যে প্রত্যাশা করেছিলেন, তা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তাঁর বক্তব্য আমাদের সমাজের প্রতি একটি প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়—আমরা কি সত্যিই আমাদের সাহসী এবং সৃজনশীল মানুষদের মূল্য দিতে পারি?