নয়াদিল্লি: সোমবার রাতে রাজধানীতে ঘটে গেছে ভয়াবহ আত্মঘাতী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের দিন ই বেআইনি বিস্ফোরক সহ গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক ডাক্তার। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে ডাক্তার হলেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখত জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে। জঙ্গি আঁতাতের অভিযোগে নাম উঠে এসেছে আল ফালাহ কলেজেরও।
এবার এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে সরব বিখ্যাত সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন। তিনি বার বার ধর্ম সংক্রান্ত মন্তব্য করে মৌলবাদীদের বিরাগভাজন হয়েছেন। বুধবার তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইলে বলেছেন তসলিমা বলেন, যুক্তিবাদ বা বিজ্ঞানমনস্কতা জন্ম নেয় প্রশ্ন করার সাহস থেকে যখন মানুষ প্রচলিত বিশ্বাসকে পরীক্ষা করে দেখার মানসিকতা গড়ে তোলে।
ভোট গণনার আগেই বাহুবলীর বাড়িতে শুরু উৎসবের আয়োজন
তসলিমার মতে “শুধু প্রযুক্তিগত জ্ঞান থাকলেই মানুষ প্রগতিশীল হয় না,”। তিনি আরও যোগ করেন, “যাঁরা দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, বিবর্তন তত্ত্ব, ইতিহাস বা সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন, তাঁরাই যুক্তি ও মানবতার সংমিশ্রণে সত্যিকারের সভ্য সমাজ গড়ে তুলতে পারেন।”
তসলিমার বক্তব্যের মূল সুর ধর্মীয় গোঁড়ামি বা মতাদর্শগত অন্ধতা শিক্ষার সঙ্গে অসঙ্গত। তাঁর মতে, শিক্ষা যদি কৌতূহল জাগাতে না পারে, তাহলে তা কেবল যান্ত্রিক জ্ঞান হয়ে থাকে। “যে শিক্ষা চিন্তার স্বাধীনতায় বাধা দেয়, সেটি সমাজের অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেয়,” লিখেছেন তিনি।
তিনি ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে বলেন, ইউরোপের আলোকিত যুগে যাঁরা গির্জার কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, তাঁরাই আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি গড়েছেন। দক্ষিণ এশিয়াতেও মুক্তচিন্তকরা ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যুক্তির লড়াই চালিয়ে গেছেন। সেই প্রেরণাতেই আজও যুক্তিবাদী মানুষরা লড়াই চালাচ্ছেন—অন্ধ বিশ্বাসের অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর সন্ধানে।
তসলিমা সতর্ক করেছেন—“আজ যখন পৃথিবী কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা আর অপবিজ্ঞানে আক্রান্ত, তখন বিজ্ঞানমনস্কতার বিকাশ শুধু প্রয়োজন নয়, নৈতিক কর্তব্যও বটে।” তাঁর মতে, শিক্ষার কাজ শুধুই পেশাজীবী তৈরি করা নয়, বরং এমন নাগরিক গড়ে তোলা, যারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে জানে, আবেগের চেয়ে প্রমাণকে গুরুত্ব দেয়, এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য করতে পারে।
লেখিকার বক্তব্যে উঠে এসেছে একটি তীব্র প্রশ্ন আমরা কি এমন এক সমাজ গড়ে তুলছি যেখানে মানুষ প্রশ্ন করতে ভয় পায়? যদি তাই হয়, তাহলে সেই সমাজের অগ্রগতি থেমে যাবে। “যে সমাজ প্রশ্নকে স্তব্ধ করে দেয়, সে সমাজ অগ্রগতিকেও স্তব্ধ করে দেয়,” লিখেছেন তসলিমা।
এই বক্তব্যে যেমন আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তেমনি ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন আহ্বানও শোনা যাচ্ছে। তাঁর মতে, আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে জরুরি হলো—মুক্তচিন্তা, মানবতা, এবং সাহসের চর্চা।
“জ্ঞান যখন উদারতার সঙ্গে মেলে, যুক্তি যখন সাহসের সঙ্গে হাত মেলায়, তখনই মানবতা সত্যিকারের মুক্তি পায়,”—এই বার্তাই তসলিমার লেখার কেন্দ্রে। যখন রাজধানী কাঁপছে বিস্ফোরণের আতঙ্কে, ঠিক তখনই তাঁর এই যুক্তিবাদী বার্তা যেন অন্ধকার সময়েও এক আলোর স্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছে।


