বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবিতে মমতাকে নিশানা তরুণ চুঘের

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনের শুনানির প্রেক্ষাপটে বিজেপি নেতা তরুণ চুঘ (tarun chugh) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।…

tarun chugh slams mamata

পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা আবেদনের শুনানির প্রেক্ষাপটে বিজেপি নেতা তরুণ চুঘ (tarun chugh) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন। তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে “মুসলিম, মুসলিম লীগ এবং দাঙ্গাবাজদের সুরক্ষা” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

   

তরুণ চুঘ তাঁর বিবৃতিতে বলেন (tarun chugh)

তরুণ চুঘ (tarun chugh) তাঁর বিবৃতিতে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক এজেন্ডা এখন শুধু মুসলিম, মুসলিম লীগ এবং দাঙ্গাবাজদের সুরক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ। হিন্দুদের উপর আক্রমণ, ধর্ষণ এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলির উপর অভিযোগ আরোপ করা তাঁর সরকারের নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির এখন একটাই লক্ষ্য—‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকি সুরক্ষা’। বাংলা এখন পরিবর্তন চায় এবং আধুনিক জিন্নাহ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়।”

চুঘের (tarun chugh) এই মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে এসেছে। সম্প্রতি রাজ্যে সংঘটিত কিছু সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগে বিজেপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।

এই অভিযোগের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে একাধিক আবেদন দায়ের করা হয়েছে। এই আবেদনগুলিতে বলা হয়েছে যে, রাজ্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে।

চাকরি হারালেও প্রশিক্ষণ ও বেতন সুবিধা দিচ্ছে Infosys

‘আধুনিক জিন্নাহ’

তরুণ চুঘের (tarun chugh) মন্তব্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আধুনিক জিন্নাহ’ হিসেবে উল্লেখ করা বিশেষভাবে বিতর্কিত হয়েছে। এই তুলনা ঐতিহাসিকভাবে সংবেদনশীল এবং এটি রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) সমর্থকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। টিএমসি নেতারা এই ধরনের মন্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কুণাল ঘোষ বলেছেন

টিএমসি মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ইতিমধ্যে চুঘের মন্তব্যের নিন্দা করে বলেছেন, “বিজেপি বাংলায় তাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ঢাকতে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের পথ বেছে নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের নেত্রী এবং তাঁর সরকার সকলের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এই ধরনের বিষাক্ত মন্তব্য বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।”

এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে রাষ্ট্রপতি শাসনের আবেদনের শুনানি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। আদালত রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সংবিধানের ৩৫৬ অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করছে।

বিজেপি এবং অন্যান্য আবেদনকারীরা যুক্তি দিয়েছেন যে, রাজ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা এবং সরকারের নিষ্ক্রিয়তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিপন্ন করছে। অন্যদিকে, রাজ্য সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা সকল সম্প্রদায়ের সুরক্ষা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক

সামাজিক মাধ্যমে তরুণ চুঘের মন্তব্য নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। একদিকে বিজেপি সমর্থকরা তাঁর বক্তব্যকে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কৌশল হিসেবে দেখছেন, অন্যদিকে টিএমসি এবং অন্যান্য বিরোধী দল এটিকে বিভাজনকারী এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে সমালোচনা করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য আসন্ন নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের শুনানির ফলাফল পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি আদালত রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে রায় দেয়, তবে এটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হবে। অন্যদিকে, আবেদন খারিজ হলে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

এই ঘটনা ভারতের রাজনৈতিক মঞ্চে সাম্প্রদায়িক বক্তব্য এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্বের বিষয়ে নতুন করে আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তরুণ চুঘের মতো মন্তব্য কীভাবে জনগণের মধ্যে প্রভাব ফেলবে এবং এটি বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণে কী পরিবর্তন আনবে, তা সময়ই বলবে।

Advertisements