তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, এন জেন্সি রাজ্যের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মহিলা হিসেবে ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি অর্জন করেছেন এবং চেন্নাইয়ের লয়োলা কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
তাঁর এই অসাধারণ অর্জন শিক্ষার মাধ্যমে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করেছে এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের কাছ থেকে রাজ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। জেন্সির যাত্রা শিক্ষার শক্তি এবং সামাজিক বাধা অতিক্রম করার দৃঢ়তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
লয়োলা কলেজের (Tamilnadu) ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জেন্সির নিয়োগকে তামিলনাড়ুর উচ্চশিক্ষায় ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধিত্বের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক পদে নিযুক্ত হলেও আশাবাদী যে শীঘ্রই তিনি স্থায়ী অনুষদ সদস্য হবেন। মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন এক্স-এ একটি পোস্টে জেন্সিকে অভিনন্দন জানিয়ে লিখেছেন, “আপনার কঠোর পরিশ্রম শিক্ষার মাধ্যমে উন্নতি করতে চাওয়া শত শত মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে উঠুক। শিক্ষার শক্তি দিয়ে তারা বাধা ও প্রত্যাখ্যান অতিক্রম করে জয়ী হোক।”
তিরুত্তানির (Tamilnadu) আর কে পেটের বাসিন্দা জেন্সির জীবনযাত্রা ছিল অধ্যবসায় ও উৎসর্গের এক গল্প। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা জেন্সি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বাধা অতিক্রম করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি তিরুত্তানির সরকারি আর্টস কলেজ থেকে স্নাতক এবং ডঃ আম্বেদকর আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি বিএ এবং এমএ-তে স্বর্ণপদক জিতেছিলেন। তাঁর পিএইচডি গবেষণা প্রকৃতি ও সাহিত্যের সম্পর্কের উপর ছিল, যা তিনি লয়োলা কলেজ থেকে সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণার গাইড এবং ইংরেজি বিভাগের প্রধান পি মেরি বিদ্যা পোর্সেলভি তাঁর গবেষণা সম্পন্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
জেন্সির শিক্ষাগত যাত্রা সহজ ছিল না। এমফিল করার সময় তিনি ঘোষক, উপস্থাপক এবং টিউটর হিসেবে কাজ করে লিঙ্গ পুনর্নির্ধারণ সার্জারির জন্য অর্থ সঞ্চয় করেন (Tamilnadu)। ২০১৯ সালে পিএইচডি-তে ভর্তির পর তিনি তাঁর ট্রান্সজেন্ডার পরিচয় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমার পরিবার হতবাক হয়েছিল, কিন্তু তারা আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিল না।” তিনি তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করছেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন, “শিক্ষা জীবন বদলাতে পারে।”
লয়োলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রধান পি মেরি বিদ্যা পোর্সেলভি জেন্সির প্রতিশ্রুতি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশংসা করে বলেন, “তিনি সাধারণ ইংরেজি এবং কথ্য ইংরেজি পড়াচ্ছেন। ছাত্ররা তাঁকে গ্রহণ করেছে। তাঁর উপস্থিতি আমাদের শিক্ষা সম্প্রদায়কে সমৃদ্ধ করবে এবং সকলের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠবে।”
জেন্সির এই অর্জন ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী বার্তা। তিনি বলেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একটি সরকারি কলেজে চাকরির জন্য আবেদন করছি। আমি ট্রান্সজেন্ডারদের (Tamilnadu) প্রতি মানুষের স্টিরিওটাইপ ভাঙতে চাই।” তাঁর আগে ডঃ আম্বেদকর আর্টস কলেজে অতিথি প্রভাষক হিসেবে কাজ করার সময় তিনি প্রমাণ করেছেন যে যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ পাওয়া সম্ভব। তবে, তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে প্রত্যাখ্যানের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
তামিলনাড়ু সরকার ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ২০২১ সালে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন রাজ্য উন্নয়ন নীতি পরিষদে ট্রান্সজেন্ডার নার্থকী নটরাজকে অন্তর্ভুক্ত করেন। জেন্সির অর্জন এই প্রেক্ষাপটে আরও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি শিক্ষার মাধ্যমে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির একটি উদাহরণ।
সামাজিক মাধ্যমে জেন্সির এই সাফল্য উদযাপিত হচ্ছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “ডঃ এন জেন্সির নিয়োগ তামিলনাড়ুর উচ্চশিক্ষায় একটি প্রথম পদক্ষেপ।” আরেকটি পোস্টে বলা হয়েছে, “জেন্সি প্রমাণ করেছেন যে শিক্ষাই হল আয়ুধ।” এই পোস্টগুলো তাঁর প্রতি সমাজের সমর্থন ও প্রশংসার প্রতিফলন।
জেন্সির গল্প ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে। তিনি বলেন, “ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ে প্রতিভার অভাব নেই, কিন্তু স্টিগমার কারণে অনেকে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী সুযোগ পায় না।” তিনি সমাজে ট্রান্সজেন্ডারদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
লয়োলা কলেজ ট্রান্সজেন্ডার (Tamilnadu) শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ প্রদানের জন্য পরিচিত। ২০১৯ সালে কলেজ দুই ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থী মির্থুল্লা এবং দিয়াকে স্নাতক কোর্সে ভর্তি করে। জেন্সি নিজে লয়োলাকে “একটি মন্দির” হিসেবে বর্ণনা করেন, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীরা সুযোগ পান।
জেন্সির এই অর্জন তামিলনাড়ুর (Tamilnadu) ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের জন্য একটি মাইলফলক। তাঁর যাত্রা তরুণ ট্রান্সজেন্ডারদের শিক্ষার মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের জন্য অনুপ্রাণিত করবে। তাঁর সাফল্য প্রমাণ করে যে শিক্ষা ও দৃঢ়তা সামাজিক বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে সাহায্য করতে পারে।