ইউটিউব দেখে শরীর চর্চার জেরে করুণ পরিণতি কিশোরের

ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব অপরিসীম। তবে এই প্রভাবের একটি কালো পাশ সম্প্রতি তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) থেকে উঠে এসেছে, যা কোনো কিশোরের জীবনের সঙ্গে জড়িত।…

tamil Nadu Teen’s Tragic Death Linked to YouTube-Inspired Juice-Only Diet

ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাব অপরিসীম। তবে এই প্রভাবের একটি কালো পাশ সম্প্রতি তামিলনাড়ু (Tamil Nadu) থেকে উঠে এসেছে, যা কোনো কিশোরের জীবনের সঙ্গে জড়িত। একজন ১৭ বছর বয়সী তামিলনাড়ুবাসী কিশোর তিন মাস ধরে শুধুমাত্র রসের (juice-only) ডায়েট অনুসরণ করার ফলে প্রাণ হারিয়েছে। এই দুঃখজনক ঘটনার পেছনে দায়ী হয়েছে একটি ইউটিউব ভিডিও, যা এই কিশোরকে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহার এবং অপরিশোধিত তথ্যের বিপদের কথা জোর দিয়ে বলছে, যা বিশেষ করে কিশোরদের মনে গভীর প্রভাব ফেলছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই কিশোরটি একটি জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেলে দেখা একটি “স্বাস্থ্য উন্নয়ন” ভিডিওতে প্রভাবিত হয়ে শুধুমাত্র ফলের রস খাওয়ার ডায়েট শুরু করে। এই ডায়েটে তিনি কোনো দ্রব্যমান খাবার গ্রহণ করেননি, যা তার শরীরের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ছিল। তিন মাস পরে, যখন তিনি আবার সাধারণ খাদ্য গ্রহণের চেষ্টা করেন, তখন তার শরীরে গুরুতর জটিলতা দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত সে প্রাণ হারায়। চিকিৎসকদের মতে, এই ধরনের একটি কঠোর ডায়েট শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি থেকে বঞ্চিত করে দিয়েছিল, যার ফলে তার ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং খাদ্য পুনর্বহাল করার সময় গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

   

এই ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে। অনেকে এই ঘটনাকে ইউটিউবের অপরিশোধিত তথ্যের ফল বলে মনে করছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আজকের দিনে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়, যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। এই ধরনের ভিডিওর ফলে অনেক কিশোর ভুল পথে চলে যাচ্ছে।” অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি এই ঘটনার দায় সরাসরি বাবা-মায়েদের ওপর চাপিয়েছেন, বলে তাঁরা তাদের সন্তানের কার্যকলাপের ওপর নজরদারি রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ধরনের রস-মাত্র ডায়েটের প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, রসের ডায়েটে ক্যালোরি সীমিত হওয়ার কারণে প্রাথমিকভাবে ওজন হ্রাস হতে পারে, কিন্তু স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ শুরু করলে পুনরায় ওজন বৃদ্ধি হয় এবং এটি শারীরিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। অধিকন্তু, ২০২৩ সালে সায়েন্স ডাইরেক্ট-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কঠোর ডায়েট পৌষ্টিক উপাদানের অভাব এবং হরমোনাল ভারসাম্যহীনতার কারণে মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই ঘটনা তাই শুধু একটি ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা নয়, বরং একটি বৃহত্তর সমস্যার প্রতি সতর্কতা জাগায়।

Advertisements

ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব একটি গুরুতর বিষয় হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালে জার্নাল অফ মেডিকেল ইন্টারনেট রিসার্চ-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, শীর্ষ স্বাস্থ্য ভিডিওর ২৫% ভুল তথ্য ধারণ করে, যা বিশেষ করে কিশোরদের মতো সহজে প্রভাবিত হওয়া গোষ্ঠীকে ঝুঁকিতে ফেলে। ভারতের প্রেক্ষাপটে, ২০২৫ সালের একটি পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭৯% কিশোর সামাজিক মাধ্যমে দৈনিক তিন ঘণ্টার বেশি সময় কাটায়, যা তাদের এই মিথ্যা তথ্যের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে।

এই ঘটনার পরে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছে। সরকার ও সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম কি এই ধরনের বিষয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চালু করবে? বাবা-মায়েরা কীভাবে তাদের সন্তানদের ডিজিটাল বিষয়ে সচেতন করবেন? চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, কোনো ডায়েট বা স্বাস্থ্য পরিকল্পনা শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তিনি আরও বলেন, “ইউটিউব বা অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে দেখা তথ্যগুলো সবসময় বিশ্বস্ত হয় না। এটি শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য ব্যবহার করা উচিত, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে নয়।”

এই কিশোরের মৃত্যু একটি দুঃখজনক স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে রয়ে গেছে, যা আমাদের সবাইকে সতর্ক করে। সামাজিক মাধ্যমের সুবিধার পাশাপাশি এর ঝুঁকিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং সরকারের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কিশোরদের ডিজিটাল বিশ্বে সচেতন করা এখন সময়ের দাবি। নইলে, এই ধরনের আরও অনেক ঘটনা ঘটতে পারে, যা আমাদের সমাজের জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে।