চেন্নাই: উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ ভারতের আকাশে ফের জমছে কালো মেঘ। তামিলনাড়ু ও পুদুচেরিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানাল আঞ্চলিক আবহাওয়া দফতর। রবিবার প্রকাশিত বুলেটিনে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উপর একটি নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ২১ অক্টোবরের মধ্যে, যা উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীয় বঙ্গোপসাগরের উপর আরও ঘনীভূত হতে পারে।
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী একদিনে কোয়েম্বাটুর, নীলগিরি, ইরোড, তিরুপ্পুর, থেনি এবং তেনকাসি জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। পাশাপাশি, কেরালার বিভিন্ন জেলাতেও ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তরবঙ্গে বন্যা পুনর্গঠনের জন্য সরকারের নতুন টাস্কফোর্স
চেন্নাই এবং আশেপাশের জেলাগুলিতে বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমকসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির এক-দুটি দফা বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানিয়েছে মেট দফতর। গত দুই-তিন দিন ধরে রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, যা ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর আগমনকেই নির্দেশ করছে।
আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নীলগিরির কোটাগিরি জেলায় সর্বাধিক ১৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, আর ময়িলাদুথুরাই জেলার সিরকালীতে সর্বনিম্ন ১ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। দফতরের রবিবারের বুলেটিনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের সংলগ্ন অঞ্চলে একটি উপরের বায়ুচক্রাকার ঘূর্ণাবর্ত বর্তমানে অবস্থান করছে।
যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১.৫ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে ২১ অক্টোবরের মধ্যে নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সেটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ তামিলনাড়ু উপকূল, মান্নার উপসাগর এবং কোমোরিন এলাকায় ঘণ্টায় ৩৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বইতে পারে, যা ঝোড়ো বাতাসে ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। তাই মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন মধ্য বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রে যারা মাছ ধরতে গেছেন, তাঁদের ২১ অক্টোবর সকালে উপকূলে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সময় সমুদ্রে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম. কে. স্ট্যালিন পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার পাশাপাশি রাজ্যের মৎস্যজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অক্টোবরের শেষভাগে নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর সংমিশ্রণে দক্ষিণ ভারতের আবহাওয়া এমনিতেই অস্থির হয়ে ওঠে। এর ফলে নদী-খাল উপচে পড়া, রাস্তায় জল জমে যাওয়া এবং গ্রামীণ এলাকায় ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। চেন্নাইয়ে অনেক এলাকায় ইতিমধ্যেই জল জমে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে আবহাওয়া দফতর আশ্বস্ত করেছে, পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসবে।