বিষাক্ত কাফ সিরাপ কাণ্ডে তদন্তকারীদের রাডারে তামিল কোম্পানি

কলকাতা ৪ অক্টোবর: বিষাক্ত কাফ সিরাপ কাণ্ডে তামিলনাড়ুর একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তদন্তকারীদের রাডারে এসেছে (Cough Cyrup Case)। এই ‘কোল্ড্রিফ’ কোম্পানির কাশির সিরাপের নমুনাগুলো দূষিত বলে…

Cough Cyrup Case

কলকাতা ৪ অক্টোবর: বিষাক্ত কাফ সিরাপ কাণ্ডে তামিলনাড়ুর একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তদন্তকারীদের রাডারে এসেছে (Cough Cyrup Case)। এই ‘কোল্ড্রিফ’ কোম্পানির কাশির সিরাপের নমুনাগুলো দূষিত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই সিরাপের সঙ্গে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে ১১ শিশুর মৃত্যুর যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যা দেশব্যাপী উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তামিলনাড়ু সরকার ১ অক্টোবর থেকে এই সিরাপের বিক্রয় ও বিতরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছে এবং বাজার থেকে সব স্টক ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisements

এই ঘটনা ২০২৩ সালের বিখ্যাত কাশির সিরাপ কেলেঙ্কারির স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যেখানে দূষিত ঔষধি শিশুদের প্রাণহানি করেছিল।স্রেসান ফার্মাসিউটিক্যালস নামক চেন্নাইভিত্তিক কোম্পানিটি কাঞ্চীপুরম জেলার সুঙ্গুভারচত্রমে তার উৎপাদন কারখানায় এই সিরাপ তৈরি করে। মধ্যপ্রদেশের চিন্ধোয়াড়া জেলায় গত সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শিশু মৃত্যুর ঘটনায় এই সিরাপের ব্যবহার সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

   

‘শক্তি’-র দাপটে বাড়ছে ঝুঁকি, জারি সতর্কতা

মধ্যপ্রদেশে ৯ শিশুর মৃত্যু ঘটেছে, যাদের মধ্যে শিবম, বিধি, আদনান, উসাইদ, রিশিকা, হেতাংশ, বিকাশ, চঞ্চলেশ এবং সন্ধ্যা রয়েছে। এই শিশুরা জ্বর ও কাশির চিকিত্সায় ‘কোল্ড্রিফ’ (ব্যাচ নং SR-13, তৈরির তারিখ মে ২০২৫, মেয়াদ অক্টোবর ২০২৭) সেবন করেছিল, যার ফলে তাদের কিডনি ফেলিওর হয়। রাজস্থানের সিকার ও ভরতপুরে দুই শিশুর মৃত্যু ঘটেছে, যেখানে একই ধরনের ডেক্সট্রোমেথর্ফান-ভিত্তিক সিরাপের সন্দেহ করা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা কামাল নাথ এই মৃত্যুর জন্য ‘ব্রেক অয়েল সলভেন্ট’ মিশ্রিত সিরাপকে দায়ী করেছেন।

তামিলনাড়ুর ড্রাগস কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট মধ্যপ্রদেশের ড্রাগ কন্ট্রোলারের সতর্কতার পর তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে। ১ অক্টোবর সকালে সংবাদ পাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে কোম্পানির কারখানায় তদন্ত শুরু হয় এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সরকারি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষায় দেখা গেছে, সিরাপে ডায়ইথিলিন গ্লাইকল (DEG) দূষণ রয়েছে—যার ঘনত্ব ৪৮.৬% w/v, যা বিপজ্জনকভাবে উচ্চ।

এই বিষাক্ত রাসায়নিক কিডনিতে গুরুতর ক্ষতি করে এবং শিশুদের জন্য মারাত্মক। উপ-নির্দেশক এস. গুরুভারতী জানান, “আমরা প্রোপিলিন গ্লাইকলের অশুদ্ধি পরীক্ষায় ফোকাস করেছি, যা অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে আলাদা।” কোম্পানিকে উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শো-কজ নোটিস জারি করা হয়েছে। রাজ্যের সব ড্রাগ ইন্সপেক্টরদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ফার্মেসিগুলোতে বিক্রয় বন্ধ করতে এবং স্টক ফ্রিজ করতে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এই ফলাফলের সাংঘর্ষিকতা চোখে পড়ার মতো। মন্ত্রণালয় ৩ অক্টোবর জানিয়েছে, জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (এনসিডিসি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি (এনআইভি) এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)-এর পরীক্ষায় নমুনায় DEG বা ইথিলিন গ্লাইকল পাওয়া যায়নি। মধ্যপ্রদেশে ১৩টি নমুনার মধ্যে ৩টির পরীক্ষায় কোনো দূষণ পাওয়া যায়নি, এবং একটি ক্ষেত্রে লেপটোস্পায়ারোসিস রোগ নিশ্চিত হয়েছে। তবু, তামিলনাড়ুর ফলাফলের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আরও তদন্ত চলছে।