বৃহস্পতিতেই বিশেষ বিমানে ভারতে প্রত্যর্পণ মুম্বই হামলার মূলচক্রী তাহাউর

২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে (Tahawwur Rana) বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ বিমানে ভারতে আনা হতে পারে বলে বুধবার জানা গেছে। এই তথ্য…

What Pak Said On Tahawwur Rana

২০০৮ সালের মুম্বই সন্ত্রাস হামলার অন্যতম অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে (Tahawwur Rana) বৃহস্পতিবার একটি বিশেষ বিমানে ভারতে আনা হতে পারে বলে বুধবার জানা গেছে। এই তথ্য সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ৬৪ বছর বয়সী রানা, যিনি পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক, বর্তমানে লস অ্যাঞ্জেলেসের মেট্রোপলিটন ডিটেনশন সেন্টারে বন্দি রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রত্যর্পণের সমস্ত আইনি বাধা দূর হওয়ার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, একটি বহু-সংস্থার টিম যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছে এবং সেখানকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমস্ত কাগজপত্র ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে, যাতে রানাকে ভারতে আনা যায়। রানা তার প্রত্যর্পণ এড়াতে শেষ মুহূর্তে একটি আবেদন করেছিলেন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তা খারিজ করে দিয়েছেন।

বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আপনারা সবাই জানেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তার আবেদন খারিজ করেছে। তাহাউর রানার প্রত্যর্পণের বিষয়ে এই মুহূর্তে আমার কাছে কোনো আপডেট নেই।” তিনি আরও বলেন, “উপযুক্ত সময়ে আমরা আপনাদের আপডেট দেব।”

তাহাউর রানা পাকিস্তানি-আমেরিকান সন্ত্রাসী ডেভিড কোলম্যান হেডলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বলে পরিচিত। হেডলি ছিলেন ২৬/১১ হামলার অন্যতম প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর, ১০ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসী আরব সাগরের জলপথে মুম্বইয়ে প্রবেশ করে একটি সমন্বিত হামলা চালায়। তারা একটি রেলওয়ে স্টেশন, দুটি বিলাসবহুল হোটেল এবং একটি ইহুদি কেন্দ্রে আক্রমণ করে। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা এই হামলায় ১৬৬ জন নিহত হন। এই ঘটনা দেশে গভীর শোকের সঞ্চার করেছিল এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।

২০১২ সালের নভেম্বরে, এই হামলার একমাত্র জীবিত বন্দুকধারী আজমল আমির কসাবকে পুণের য়েরাওয়াড়া জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়। তবে, এই হামলার পিছনে থাকা অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার এখনও পুরোপুরি সম্পন্ন হয়নি। রানার প্রত্যর্পণ এই দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, তার প্রশাসন একজন “খুবই দুষ্ট” ব্যক্তির প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিয়েছে, যিনি ভারতে বিচারের মুখোমুখি হবেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করছি এবং ভারতের জন্য জিনিসগুলো আরও ভালো করতে চাই।”

রানা তার জরুরি আবেদনে প্রত্যর্পণ এবং ভারতে সমর্পণের উপর স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন। তিনি তার ১৩ ফেব্রুয়ারির আবেদনের ভিত্তিতে সমস্ত আপিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার দাবি জানান। ওই আবেদনে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তার প্রত্যর্পণ যুক্তরাষ্ট্রের আইন এবং জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী সনদের লঙ্ঘন করে। তিনি দাবি করেন, “ভারতে প্রত্যর্পিত হলে তার উপর নির্যাতনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার জন্য যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে।”

Advertisements

রানা আরও বলেন, তার পাকিস্তানি মুসলিম পরিচয় এবং মুম্বই হামলার সঙ্গে যোগসূত্রের কারণে তিনি ভারতে নির্যাতনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তিনি তার স্বাস্থ্যের অবস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতীয় কারাগারে তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তার এই যুক্তি গ্রহণ করেনি এবং তার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে।

ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) দীর্ঘদিন ধরে রানার প্রত্যর্পণের দাবি জানিয়ে আসছিল। এনআইএ-এর একটি দল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। রানার ভারতে আগমনের পর তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। তাকে ২৬/১১ হামলায় সহায়তা এবং ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

এই প্রত্যর্পণ ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সহযোগিতার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এটি ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। রানার বিচারের মাধ্যমে মুম্বই হামলার পিছনে থাকা ষড়যন্ত্রের আরও তথ্য প্রকাশ পেতে পারে, যা পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার ভূমিকার উপর নতুন আলোকপাত করতে পারে।

এই ঘটনা ভারতের নাগরিকদের মনে ২৬/১১-এর ভয়াবহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। রানার প্রত্যর্পণের মাধ্যমে অনেকে আশা করছেন যে, এই হামলার পিছনে থাকা সমস্ত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে। সূত্র জানিয়েছে, বিশেষ বিমানটি বৃহস্পতিবার রাতে বা শুক্রবার ভোরে ভারতে পৌঁছতে পারে।