লখনউ ২ ডিসেম্বর: উত্তর প্রদেশের লখনউতে বিশাল আলোড়ন তৈরি করল (Tablighi Jamaat Conversion)এক প্রাক্তন তাবলিঘি জামাত সদস্যের অভিযোগ। সংগঠন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর স্বালীন নামে এক যুবক সোমবার পৌঁছান বিশ্ব হিন্দু রক্ষা পরিষদের লখনউ অফিসে।
সেখানে তিনি দাবি করেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাকি একটি সু-সংগঠিত গোপন প্ররোচনামূলক নেটওয়ার্ক কাজ করছে, যেখানে পরিচয় গোপন করে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সম্পর্ক তৈরি করা হয় এবং পরবর্তীতে ধর্মান্তরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। স্বালীন তাঁর ভাষায় এটিকে “দেশজোড়া গ্রুমিং ও কনভার্সন সিন্ডিকেট” হিসেবে বর্ণনা করেন।
স্বালীনের দাবি অনুযায়ী, তিনি দীর্ঘদিন তাবলিঘি জামাতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সংগঠনটি থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর কথায়, সংগঠনের ভিতরে থেকেই তিনি নাকি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড লক্ষ করেছেন, যা তাঁকে ক্রমশ অস্বস্তিতে ফেলেছিল। লখনউ অফিসে হাজির হয়ে তিনি জানান, দিল্লির নাজমুদ্দিন মারকাজের এর মাধ্যমে নাকি এই ধরনের কার্যকলাপ পরিচালিত হয়।
স্বালীন অভিযোগ করেন, “বিদেশি ফাণ্ডিংয়ের উপর নির্ভর করে একটি গোটা নেটওয়ার্ক কাজ করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কয়েকটি দল পরিচয় গোপন করে তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করে। অনেক সময় নিজেদের নাম পাল্টে, ভুয়ো পরিচয়ে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক তৈরি করা হয়।”
তবে তাঁর এই অভিযোগের কোনও সরকারি বা অনুসন্ধানমূলক প্রমাণ এখনও সামনে আসেনি। সংশ্লিষ্ট সংগঠন বা কর্তৃপক্ষও এই মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ফলে স্বালীনের দাবি ঠিক কতটা বাস্তবসম্মত কিংবা কতটা তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উত্থাপিত—তা যাচাই না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
লখনউতে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক কথোপকথনে স্বালীন বলেন, “অনেক তরুণকে ভুল পথে চালিত করা হয়। লক্ষ্য থাকে মেয়েদের এবং কখনও ছেলেদেরও। বন্ধুত্ব, প্রেম সবকিছুই কখনও কখনও একটি বড় পরিকল্পনার অংশ। যারা জড়িয়ে পড়ে, তাদের অনেকেই জানতেই পারে না কীভাবে তারা ফাঁদে আটকে যাচ্ছে।” তাঁর দাবি অনুযায়ী, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কই নয়, বরং সামাজিক বিভাজন ও অস্থিরতা তৈরির পরিস্থিতিও তৈরি হয়।
এই অভিযোগ সামনে আসার পর স্থানীয় মহলে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ এই মন্তব্যকে অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ বলে মনে করছেন, আবার অনেকে বলছেন যতক্ষণ পর্যন্ত আইনগত তদন্ত না হয়, ততক্ষণ কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের সংবেদনশীল অভিযোগের ক্ষেত্রে সাবধানতা এবং যথাযথ তথ্য-যাচাই অপরিহার্য।
স্বালীন নিজে দাবি করেছেন, তিনি কোনও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা বা গোষ্ঠীগত বিদ্বেষের কারণে নয়, বরং সমাজের স্বার্থেই এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আনছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি চাই সত্যিটা তদন্তের মাধ্যমে সামনে আসুক। যদি আমি ভুল হয়ে থাকি, তবে তদন্তেই তা বেরিয়ে আসবে। কিন্তু যদি আমার অভিজ্ঞতা সত্যি হয়, তাহলে সেটা দেশের বহু তরুণ-তরুণীর সুরক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রশ্ন।”
এই প্রেক্ষিতে স্বালীন একটি জাতীয় পর্যায়ের তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁর মতে, শুধু কোনও রাজ্যস্তরের অনুসন্ধান নয়, বরং কেন্দ্রীয় সংস্থার মাধ্যমে একটি বিস্তৃত তদন্ত হওয়া উচিত, যাতে তাঁর অভিযোগগুলো যাচাই করা যায় এবং যদি কোনও সংগঠিত অপরাধ সত্যিই থেকে থাকে, তাহলে তা আইনের আওতায় আনা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক সমাজে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া ও পরিচয় পরিবর্তনের সুবিধা সবই সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রকে আরও জটিল করে তুলেছে। পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ স্থাপন করা আজকাল খুবই সহজ। তবে প্রতিটি ঘটনার পেছনে অপরাধমূলক উদ্দেশ্য থাকে না। তাই যাচাই-বাছাই ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয় বলেই মনে করেন সমাজবিদ ও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
