সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, (Syria War) যা দীর্ঘ দশ বছর ধরে চলতে থাকায় দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, এবার এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো। সিরিয়ার (Syria War) প্রধানমন্ত্রী মহম্মদ গাজ়ি জালালি সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, তিনি সরকার বিদ্রোহী দলগুলোর হাতে সঁপে দিতে প্রস্তুত।
একে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মহলে নানা ধরণের জল্পনা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত সিরিয়ার (Syria War) বর্তমান শাসক বাশার আল-আসাদ এবং তার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী দলের অগ্রযাত্রা এবং সরকারের প্রতি বিদ্রোহীদের শক্তিশালী দাবির কারণে।
এদিকে, বিদ্রোহী বাহিনী, যার নেতৃত্বে রয়েছে ইসলামিক গ্রুপ হায়াত তাহরির আল-শাম, গত ২৭ নভেম্বর থেকে সিরিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর দখল করতে শুরু করে। গত রবিবার, তারা সিরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে এবং বর্তমানে তাদের লক্ষ্য দমাস্কাস, সিরিয়ার রাজধানী। বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা দেশটির একাধিক গুরুত্বপূর্ণ শহরের দখল নেওয়া ও সরকারবিরোধী অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে। তাদের আক্রমণের ফলে দেশের সবচেয়ে বড় শহর আলেপ্পো এবং হামাও বিদ্রোহীদের কব্জায় চলে গেছে।
সিরিয়া ২০১১ সালে একটি গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন থেকে গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়, যখন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার জনগণের দাবির মুখে ব্যাপক দমন-পীড়ন চালায়। সে সময়ের পর থেকে দেশটি মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৫,০০,০০০ এরও বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, এবং দেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মতে, এ যুদ্ধের ফলে ৩.৭ লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
বিদ্রোহী বাহিনীর এই অভিযানের মধ্যে এক বড় রাজনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। সরকার পক্ষ এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে এই দীর্ঘ যুদ্ধের মাঝে অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা মতামত প্রকাশ করেছে। সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইমাদ খামিসের সাম্প্রতিক ঘোষণায় যে, তিনি সরকার বিদ্রোহীদের হাতে সঁপে দিতে প্রস্তুত, তা অনেকেই সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অস্বস্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এদিকে, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘর্ষের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “আমেরিকা সিরিয়ার পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। সিরিয়া একটি বিশৃঙ্খলার মধ্যে রয়েছে, কিন্তু এটি আমাদের বন্ধু নয় এবং আমাদের কিছু করার নেই। এটি আমাদের যুদ্ধ নয়। এটা তাদের বিষয়, তাদেরই তা পরিচালনা করতে দিন।” ট্রাম্পের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, তিনি সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আমেরিকান হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে। তার এই অবস্থান তার রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যাচ্ছে, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আমেরিকার একতরফা হস্তক্ষেপের বিরোধী।
সিরিয়ার এই পরিস্থিতি বিশ্ব রাজনীতিতে নানা রকমের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি যেমন রাশিয়া, ইরান, তুরস্ক এবং আমেরিকা, প্রতিটি দেশই তাদের নিজস্ব স্বার্থ এবং রাজনৈতিক ধারণা অনুযায়ী সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে। রাশিয়া, ইরান এবং তুরস্কের মতো দেশগুলি সরকার পক্ষকে সমর্থন করছে, যেখানে আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলি বিদ্রোহী পক্ষের সমর্থন জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে, সিরিয়ার জনগণ ব্যাপক দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। দেশটির সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা বিদ্রোহী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় বাস করছেন, তাদের জীবিকা, নিরাপত্তা এবং মানবাধিকার চরম সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি বারবার সিরিয়ার জনগণের উপর চলা সহিংসতা এবং মানবিক বিপর্যয়ের সমালোচনা করেছে, তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সমাধান এখনও পরিলক্ষিত হয়নি।
এখন পর্যন্ত, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য এক অদ্ভুত বিপদসীমায় পৌঁছেছে। যেহেতু সরকার ও বিদ্রোহী বাহিনী উভয়ই নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে, তাই আসন্ন দিনগুলোতে সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা থাকবে। তবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা এবং সঠিক রাজনৈতিক সমাধান না হলে, সিরিয়ার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, যা সারা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।