মুম্বই: সমুদ্রের বুকে ভেসে থাকা একটি সন্দেহজনক নৌকা ঘিরে রবিবার সকাল থেকে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মহারাষ্ট্রের রায়গড় উপকূলে। রেভদান্ডার কোরলাই উপকূল থেকে প্রায় দুই নটিক্যাল মাইল দূরে নৌকাটিকে ভাসতে দেখা যায়। প্রশাসনের আশঙ্কা, এটি বিদেশি কোনও দেশের হতে পারে এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
নৌকাটির উৎস অজানা, রয়েছে বিদেশি চিহ্নের ইঙ্গিত
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নৌকাটি হয়তো প্রাকৃতিক কারণে ভেসে এসেছে, তবে তাতে বিদেশি দেশের নাম বা চিহ্ন থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা। কোনও অনধিকৃত অনুপ্রবেশ বা গোপন চক্রের যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার খবর পাওয়ার পর রায়গড় জেলা পুলিশ, বম্ব ডিটেকশন অ্যান্ড ডিসপোজাল স্কোয়াড (BDDS), কুইক রেসপন্স টিম (QRT), ভারতীয় নৌসেনা ও কোস্ট গার্ড একযোগে ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
নিজেই সাগরে নামলেন পুলিশ সুপার Suspicious Boat at Maharashtra Coast
অসাধারণ উদ্যোগ নেন রায়গড়ের পুলিশ সুপার অঁচল দালাল। তিনি নিজে একটি বার্জে করে সমুদ্রপথে সন্দেহভাজন নৌকার কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন,
“এসপি নিজে যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।”
উপকূলজুড়ে নিরাপত্তা বলয়, সতর্কতা সর্বোচ্চ স্তরে
সন্দেহভাজন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, কোরলাই-সহ গোটা রেভদান্ডা উপকূলে মজবুত নজরদারি জারি করা হয়েছে। স্থানীয় থানা, কোস্টাল পুলিশ ও নৌবাহিনী সমন্বয়ে কাজ করছে। এছাড়া গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে এবং কোনও অস্বাভাবিক গতি-বিধি নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২২ সালের অস্ত্রবাহী নৌকার স্মৃতি ফিরে এল
অনেকে ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে তুলনা করছেন ২০২২ সালের সেই ঘটনার সঙ্গে, যখন রত্নাগিরি উপকূলে একটি অস্ত্রভর্তি পরিত্যক্ত নৌকা ভেসে এসেছিল, যা নিয়ে জাতীয় স্তরে সাড়া পড়ে গিয়েছিল। যদিও এবারের নৌকাটিতে এখনো পর্যন্ত কোনও অস্ত্র বা বিস্ফোরক মেলেনি, তবে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানেই রয়েছে।
পরবর্তী পদক্ষেপ: আবহাওয়ার উন্নতির অপেক্ষায় প্রশাসন
আবহাওয়া অনুকূলে এলেই নৌকাটি ঘনিষ্ঠভাবে পরীক্ষা করা হবে। তল্লাশির জন্য প্রস্তুত রয়েছে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞ বাহিনী। এর উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনও কড়াকড়ি প্রমাণ মিললে দ্রুত কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও জানানো হবে।
সমুদ্রপথে নজরদারির গুরুত্ব ফের সামনে
ঘটনাটি ফের মনে করিয়ে দিল, ভারতের দীর্ঘ উপকূলরেখা কতটা সংবেদনশীল এবং নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে নজরদারি কতটা জরুরি। রায়গড় পুলিশের দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও পুলিশের শীর্ষ স্তরের সক্রিয়তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে।
এই ঘটনা কেবল রায়গড় বা মহারাষ্ট্র নয়, গোটা দেশের সামুদ্রিক নিরাপত্তা সচেতনতা ফের একবার তীব্র করে তুলল।