নয়াদিল্লি, ১১: ভারতের বিচারব্যবস্থার ইতিহাসে আজ এক ঐতিহাসিক দিন। সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার নিথারি ধারাবাহিক খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সুরেন্দ্র কোলিকে সমস্ত অভিযোগ থেকে খালাস ঘোষণা করেছে।
দেশের সবচেয়ে আলোচিত অপরাধগুলির মধ্যে একটি এই মামলায় আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, যথেষ্ট প্রমাণের অভাব ও তদন্তের অসঙ্গতির কারণে কোলির দোষ প্রমাণিত হয়নি। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অন্য কোনো মামলায় প্রয়োজন না থাকলে তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
রাতে রাজধানীতে বিস্ফোরণ! সকালে শান্তির দূত প্রধানমন্ত্রী
২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের নয়ডার ডি-৫ নম্বর বাড়ি—ব্যবসায়ী মনিন্দর সিং পন্ধেরের বাসভবন—ছিল এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের কেন্দ্র। বাড়ির পিছনের ড্রেন ও সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে উদ্ধার হয়েছিল একের পর এক শিশু ও মহিলার দেহাবশেষ। দেশজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছিল ‘নিথারি কাণ্ড’ নামে পরিচিত এই ঘটনার পর।
তদন্তে উঠে আসে, পন্ধেরের গৃহপরিচারক সুরেন্দ্র কোলি সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত। একে একে ১৬টি মামলায় তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ১০টি মামলায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছিল। অপরদিকে, মনিন্দর সিং পন্ধের ৫টি মামলার মধ্যে ২টিতে দোষী সাব্যস্ত হন।
কিন্তু বছর ঘুরে, প্রমাণের নানা অসঙ্গতি ও তদন্তের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবীদের একাংশ বরাবরই দাবি করে আসছিলেন যে, কোলি হয়তো ‘স্কেপগোট’ বা বলির পাঁঠা। তদন্তে বিজ্ঞানসম্মত ফরেনসিক প্রমাণের ঘাটতি এবং একাধিক সাক্ষ্যের অস্পষ্টতা আদালতের নজরে আসে।
সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়েছে, “নিচু আদালত ও হাইকোর্টের রায়ে পর্যাপ্ত যৌক্তিকতা ছিল না। প্রমাণগুলো ছিল পরোক্ষ এবং অনিশ্চিত। এমন পরিস্থিতিতে একজন মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ন্যায়সংগত নয়।” বিচারপতি দ্বয় বলেন, “অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রমাণ যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তাই তাকে খালাস দেওয়া হলো।”
রায় ঘোষণার পর নয়ডা ও পুলিস সদর দপ্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। একদিকে অনেকেই অবাক, অন্যদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা একে ন্যায়বিচারের জয় হিসেবে দেখছেন। প্রখ্যাত আইনজীবী সঞ্জয় হাজারিকা বলেন, “এই রায় শুধু এক ব্যক্তির মুক্তি নয়, বরং আমাদের বিচারব্যবস্থার মানবিকতার প্রতিফলন। যদি প্রমাণ যথেষ্ট না হয়, তবে মৃত্যুদণ্ড কখনোই হওয়া উচিত নয়।”
অন্যদিকে, নিথারি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এখনও ভয়ের স্মৃতি অমোঘ। অনেকের মতে, এই ঘটনার বিচার যতদিনই চলুক, তার মানসিক ক্ষত আজও তাজা। নিহত শিশুদের পরিবাররা বলছেন, “আমাদের সন্তানদের হত্যাকারীকে ছেড়ে দেওয়া আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন।”
নয়ডা পুলিশ জানিয়েছে, তাঁরা রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। তবে আপাতত, ১৯ বছর কারাবাসের পর সুরেন্দ্র কোলি এক নতুন জীবনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। নিথারি কাণ্ড ভারতের অপরাধ ইতিহাসে এক ভয়াবহ অধ্যায় হিসেবে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আর আজকের এই রায় আমাদের মনে করিয়ে দিল—ন্যায়বিচার দেরিতে এলেও, তা অন্ধ নয়।


