নয়াদিল্লি, ২১ নভেম্বর: রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের কাছে রাজ্য বিধানসভা পাস করা বিল অনুমোদনের সময়সীমা নির্ধারণের দাবি সংক্রান্ত বহু প্রতীক্ষিত মামলা নিয়ে বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক রায় শুনিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছে রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালকে বিল অনুমোদনের জন্য আদালত কোনও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে পারে না।
তবে একইসঙ্গে স্পষ্ট করেছে, অনুমোদন প্রদান বা প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত অনন্তকাল ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। বিচারব্যবস্থার এই ভারসাম্যমূলক অবস্থান গণতন্ত্র, কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক এবং সংবিধানের ক্ষমতার ওজনবণ্টন নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুরু হচ্ছে Flipkart Black Friday Sale 2025, ফোন-ল্যাপটপ-টিভি-ফ্রিজে বিশাল ডিসকাউন্ট
প্রধান বিচারপতি বি. আর. গবাইয়ের নেতৃত্বাধীন সাংবিধানিক বেঞ্চ অনুচ্ছেদ ১৪৩–এর আওতায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো ১৩টি প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এই রায় প্রদান করে। মূল প্রশ্ন ছিল একটি রাজ্য বিধানসভা পাস করা বিল রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের নিকট পাঠানোর পর কত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া বাধ্যতামূলক হবে কি না।
সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, “সংবিধান অনুযায়ী বিল অনুমোদনে দেরি করা না–করার প্রশ্নটি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার অংশ। আদালত এর উপর সময়সীমা প্রয়োগ করতে পারে না। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিল আটকেও রাখা যাবে না।”
রায়ের পর রাজনৈতিক মহলে তুমুল প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ আলোড়ন তৈরি করে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বক্তব্য। সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি জানান, “দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানে নিহিত ক্ষমতাগুলোকে অক্ষুণ্ণ রেখে দিয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় বার্তা। এর মানে এই নয় যে রাজ্যপাল ফাইল হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থাকতে পারেন। নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীই সরকারের মুখ, মনোনীত রাজ্যপাল নন। সংবিধান প্রতিটি পদকে তার নিজস্ব লাইন দিয়েছে সেটি অতিক্রম করা যাবে না।”
বোসের কথায় স্পষ্ট, সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাজ করা উচিত। আদালতের রায়ের মাধ্যমে ‘লাইন ক্রস না করার’ বার্তাটি তিনি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, “একজোট থেকে দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই উচিত মুখোমুখি লড়াই নয়, সমন্বয়ই সমাধান।”
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন রাজ্যে বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে রাজ্যপাল–রাজ্য সরকারের দ্বন্দ্ব নতুন করে প্রকট হয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভবিষ্যতে কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্ক ও প্রশাসনিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এদিন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে রাজ্যপাল তাঁর বক্তব্যে দেশপ্রেম ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধও তুলে ধরেন। একদল ছাত্র–ছাত্রী দেশভক্তি গান গাওয়ার পর তিনি বলেন, “আমি অত্যন্ত প্রভাবিত। দেশপ্রেম এবং জাতীয়তাবাদী চেতনা লালন করার পরম্পরায় বাংলার অবদান ঐতিহাসিক। আজ Gen Z প্রজন্মের মধ্যেও সেই দেশপ্রেম জীবন্ত এটাই ভারতের শক্তি।”
রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের ভূমিকা নিয়ে আইনি ব্যাখ্যার পাশাপাশি আবেগময় এই দেশের প্রতি ভালোবাসার বার্তাও সংবাদ মাধ্যমে বড়ভাবে উঠে আসে। আদালতের রায় রাজনৈতিক উত্তাপ কিছুটা প্রশমিত করলেও কেন্দ্র ও রাজ্যের ক্ষমতার টানাপোড়েনকে সম্পূর্ণ বন্ধ করবে কি না সে প্রশ্নের উত্তর দেবে ভবিষ্যতের রাজনীতি।


