নয়াদিল্লি: দেশের বিভিন্ন রাজ্যে প্রণীত ধর্মান্তর বিরোধী আইনের বৈধতা নিয়ে দায়ের হওয়া একাধিক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করেছে। প্রধান বিচারপতি (CJI) বি.আর. গাভাই ও বিচারপতি কে. বিনোদ চন্দ্রনের বেঞ্চ জানিয়েছে, এই আইনগুলির সাংবিধানিক বৈধতা প্রশ্নে রাজ্যগুলির মতামত শোনা প্রয়োজন। সেই কারণে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। মামলাটি পুনরায় শুনানির জন্য আগামী ছয় সপ্তাহ পরে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
রাজ্যগুলির কঠোর আইন নিয়ে প্রশ্ন:
শুনানির সময় একাধিক পিটিশনারের পক্ষে আইনজীবীরা যুক্তি দেন, বিশেষত উত্তরপ্রদেশে প্রণীত ধর্মান্তর বিরোধী আইন অত্যন্ত কঠোর। ওই আইন ভঙ্গ করলে ন্যূনতম ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলে আদালতে দাবি করা হয়। এছাড়াও অভিযোগ করা হয় যে, এসব আইনে ‘reverse burden of proof’ অর্থাৎ অভিযুক্তের ওপরেই নিজের নির্দোষ প্রমাণের দায় চাপানো হয়েছে, যা ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতির পরিপন্থী।
আইনজীবীরা আরও জানান, আন্তঃধর্মীয় বিবাহের ক্ষেত্রে এই আইনগুলির প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে এবং জামিন পাওয়া কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ছে। কারণ, এই আইনগুলিতে জামিনের জন্য যে ‘যমজ শর্ত’ (twin conditions) রাখা হয়েছে, তা সন্ত্রাস দমন আইন যেমন ইউএপিএ (UAPA) বা টাডা (TADA)-র সমান কঠোর।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ:
আদালত যুক্তি শোনার পর জানায়, এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে যথেষ্ট সময় লাগবে। আদালতের মতে, রাজ্যগুলির মতামত ছাড়া এই মামলাগুলি নিষ্পত্তি সম্ভব নয়। সেই কারণে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশ সরকারকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এই রাজ্যগুলিকে তাদের জবাব দাখিল করতে হবে। এরপর ছয় সপ্তাহ পর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
পক্ষ-বিপক্ষের জন্য নোডাল কাউন্সেল নিয়োগ:
শীর্ষ আদালত এও স্পষ্ট করেছে যে, মামলার কার্যকরী পরিচালনার জন্য উভয় পক্ষের জন্য আলাদা নোডাল আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আবেদনকারীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৃষ্টিশি অগ্নিহোত্রি এবং রাজ্যগুলির পক্ষে অ্যাডভোকেট রুচিরা গোয়েলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আইনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে বিতর্ক:
ধর্মান্তর বিরোধী আইনগুলির বিরুদ্ধে আবেদনকারীরা দাবি করেছেন, এগুলি ভারতের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫-এ প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকারের পরিপন্থী। ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা বিবাহের মাধ্যমে ধর্ম পরিবর্তনের অধিকারকে অযথা সীমাবদ্ধ করা হচ্ছে বলেই অভিযোগ। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারগুলি মনে করছে, জোরপূর্বক বা প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরের প্রবণতা রোধে এই ধরনের আইন প্রয়োজনীয়।
মোট সাতটি রাজ্য—উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, কর্ণাটক, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলপ্রদেশ—ইতিমধ্যেই এই আইন কার্যকর করেছে। তবে আইনগুলির কঠোরতা নিয়ে নানা মহলে উদ্বেগ বাড়ছে। এখন নজর রয়েছে আগামী ছয় সপ্তাহ পরের শুনানির দিকে, যেখানে আদালত রাজ্যগুলির যুক্তি শুনে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।