কুকুর সমস্যায় রাজ্য ব্যর্থ, সুপ্রিম কোর্টের কড়া হুঁশিয়ারি

নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে বেড়ে চলা পথকুকুরের আক্রমণ নিয়ে এবার রাজ্য সরকারগুলির প্রতি তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। সোমবার শীর্ষ আদালতের এক বিশেষ বেঞ্চ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে তিরস্কার করে জানায়, “দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খারাপভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে, অথচ কোনও রাজ্যই আদালতের আগের আদেশ মানছে না।”

Advertisements

আগস্ট ২২-তারিখে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, দেশের সর্বত্র ‘ধরা-নিরীহীকরণ-টীকাদান-পুনরায় মুক্তি’ (Catch-Neuter-Release) পদ্ধতিতে পথকুকুর নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আদালতের বক্তব্য, জননিরাপত্তা ও প্রাণীকল্যাণ উভয়ের ভারসাম্য রক্ষাই এই নির্দেশের মূল উদ্দেশ্য।

   

তবে দুই মাস পার হলেও অধিকাংশ রাজ্য এখনও পর্যন্ত কোনও রিপোর্ট বা হলফনামা জমা দেয়নি। বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি বিক্রম নাথ, সন্দীপ মেহতা ও এন ভি অঞ্জারিয়া। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুই মাস সময় দেওয়া হয়েছিল, তবুও কোনও উত্তর আসেনি! আপনারা সংবাদপত্র পড়েন না? এই বিষয়টি সারা দেশজুড়ে প্রচারিত হয়েছে।”

আদালত জানায়, এ পর্যন্ত কেবল পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা এবং দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন কিছু জবাব পাঠিয়েছে, তবে দিল্লি সরকার এখনও কোনও হলফনামা দেয়নি। বেঞ্চ মন্তব্য করে, “MCD রিপোর্ট দিয়েছে, কিন্তু দিল্লি সরকার নয়? এভাবে দায়িত্ব এড়িয়ে চলা যায় না।”

এদিকে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন রাজ্যে পথকুকুরের আক্রমণের ঘটনা বেড়েছে। পুণেতে এক শিশু আক্রান্ত হয়, ভাণ্ডারায় ২০টি কুকুরের আক্রমণে গুরুতর জখম হয় এক কিশোরী। কেরলের কন্নুরে এমনকি পথকুকুর নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতে গিয়ে অভিনেতা নিজেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হন। উত্তরপ্রদেশের লখনৌ এবং তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী, এসব ঘটনায় ভারতের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। আদালত সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের আগামী শুনানিতে ব্যক্তিগতভাবে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisements

তবে কিছু রাজ্য ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ শুরু করেছে। রাজস্থানে স্থানীয় স্বশাসিত দপ্তর প্রতিটি পৌরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে, কুকুরদের নিরীহীকরণ, টীকাদান ও শনাক্তকরণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে খাওয়ানোর নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে, যাতে মানুষ-কুকুর সংঘাত কমে।

দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলের নয়ডায় ইতিমধ্যে এক সমীক্ষা শুরু হয়েছে, যেখানে আবাসিক সমিতি, পশুকল্যাণ সংস্থা ও বাসিন্দাদের অনুরোধ করা হয়েছে, ছবি ও তথ্যসহ এলাকায় কতগুলি কুকুর টীকাপ্রাপ্ত, নিরীহীকরণ করা হয়েছে বা আগ্রাসী আচরণ করে তার রিপোর্ট দিতে।

দক্ষিণ ভারতে, চেন্নাই মিউনিসিপাল কর্পোরেশন সেপ্টেম্বরে বড় আকারে অভিযান চালিয়েছে—৪৬,০০০-এরও বেশি কুকুরকে রেবিস প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হয়েছে এবং ১২,০০০ কুকুরকে মাইক্রোচিপ বসিয়ে জিও-ম্যাপিং করা হয়েছে।

আদালতের আগস্টের নির্দেশে বলা হয়েছিল, রেবিস আক্রান্ত বা আক্রমণাত্মক কুকুর ব্যতীত বাকিদের ধরা, টীকাদান, নিরীহীকরণ করে সেই এলাকা বা আশপাশে ফেরত দিতে হবে। প্রাণী জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন  অনুসারেই এই প্রক্রিয়া চালানো হবে।