রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিতাড়ন (Rohingya Deportation) নিয়ে দায়ের করা এক মামলায় শুক্রবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কড়া ভাষায় তিরস্কার করল আবেদনকারীদের। ৪৩ জন রোহিঙ্গা, যাঁদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে, তাঁদের আন্দামান সাগরে ফেলে মায়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে— এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, “দেশ যখন সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তখন আপনারা এই ধরনের কল্পনাপ্রসূত কাহিনি নিয়ে আসেন।”
বিচারপতি সুর্য কান্ত এবং বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চ আবেদনকারী মহম্মদ ইসমাইল ও অন্যান্যদের দাখিল করা তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। আদালত জানায়, রোহিঙ্গাদের আর বিতাড়নের বিষয়ে আপাতত কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ পূর্ববর্তী মামলাগুলিতেও আদালত তেমন কোনো ছাড় দেয়নি।
আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রবীণ অ্যাডভোকেট কলিন গনসালভেস আদালতকে বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার দফতর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। জবাবে আদালত সাফ জানিয়ে দেয়, “বাইরে বসে থাকা লোকজন আমাদের সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে পারে না।”
আদালত আরও বলে, ফোন কলের ভিত্তিতে যেসব দাবি করা হয়েছে, সেগুলোর কোনও যাচাই হয়নি। বিচারপতি কান্ত কটাক্ষ করে বলেন, “আগে আমরা এমন ঘটনাও দেখেছি যেখানে জামতারা (ঝাড়খণ্ড) থেকে ফোন করা হয়েছে ইউএস, ইউকে, কানাডার নম্বর ব্যবহার করে। এটা কি যাচাই করা হয়েছে যে ফোনগুলো মায়ানমার থেকেই এসেছিল?”
আবেদনকারীদের যুক্তি, গত ৮ মে শুনানির পরে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে আন্দামান নিয়ে গিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হয় এবং এখন তাঁরা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় জীবন বিপন্ন অবস্থায় আছেন। আদালত বলেন, “এই অভিযোগগুলো শুধু অভিযোগ হয়েই থাকছে, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া আমরা আগের বৃহত্তর বেঞ্চের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি না।” আদালত দাখিলকৃত আবেদনের ভাষা নিয়ে মন্তব্য করে বলেন, “চমৎকার ভাষায় সাজানো একটি গল্পমাত্র।”
এদিকে, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটার জেনারেলকে পিটিশনের কপি দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে আদালত জানায়, আগামী ৩১ জুলাই বিষয়টি তিন সদস্যের বেঞ্চে শোনা হবে।
মামলায় সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, ভারত শরণার্থী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির অংশ নয় এবং ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী বিদেশি আইন মেনেই রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন হচ্ছে।
আদালত পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়, “UNHCR কার্ডধারী হলেও তাঁরা যদি আইনের চোখে বিদেশি হন, তাহলে তাঁদের বিতাড়ন আইন মোতাবেক হবেই।”