৫ কৌতুকশিল্পীকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ শীর্ষ আদালতের

সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করে জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী সময় রায়না, বিপুল গোয়েল, বালরাজ পরমজিৎ সিং ঘাই, সোনালি ঠাক্কার এবং নিশান্ত জগদীশ…

Supreme Court

সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করে জনপ্রিয় কৌতুকশিল্পী সময় রায়না, বিপুল গোয়েল, বালরাজ পরমজিৎ সিং ঘাই, সোনালি ঠাক্কার এবং নিশান্ত জগদীশ তানওয়ারকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপহাস করার জন্য তাদের ইউটিউব চ্যানেল এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে বলেছে।

এই নির্দেশ এসেছে ‘ইন্ডিয়াজ গট ল্যাটেন্ট’ নামক একটি কমেডি শোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে অসংবেদনশীল মন্তব্য করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ এই মামলার শুনানি করেন এবং স্পষ্টভাবে বলেন যে, মুক্তভাবে বাকস্বাধীনতার অধিকার ব্যবহার করা যায় না যদি তা কোনও সম্প্রদায়ের মর্যাদাকে আঘাত করে।

   

কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই পাঁচ কৌতুকশিল্পীকে তাদের পডকাস্ট এবং শোতে প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রকাশ করতে হবে। বিচারপতি কান্ত বলেন, “আজ এটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে, কাল এটি অন্য কোনও সম্প্রদায় হতে পারে। এই ধরনের কাজ কোথায় গিয়ে শেষ হবে?” তিনি আরও জানান যে, এই ধরনের বাণিজ্যিক বক্তব্য, যা কোনও সম্প্রদায়ের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে, তা বাকস্বাধীনতার আওতায় পড়ে না।

ফাউন্ডেশনের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট অপরাজিতা সিং যুক্তি দিয়েছেন যে, সময় রায়না এবং অন্যান্য কৌতুকশিল্পীদের দ্বারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপহাস করা মন্তব্যগুলি “হেট স্পিচ” হিসেবে বিবেচিত হয়। তারা ভিডিও প্রমাণও উপস্থাপন করেছে, যেখানে দেখা গেছে যে এই ইনফ্লুয়েন্সাররা এসএমএ এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের উপহাস করছেন।

বিচারপতি বাগচী বলেন, “হাস্যরস জীবনের একটি অংশ, কিন্তু যখন এটি অন্যদের উপহাস করে এবং সংবেদনশীলতার সীমা লঙ্ঘন করে, তখন তা সমস্যাজনক হয়ে ওঠে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই ধরনের বাণিজ্যিক বক্তব্য সমাজের কোনও অংশের অনুভূতিকে আঘাত করতে পারে না।

কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্য নির্দেশিকা তৈরি করতে বলেছে, যাতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, মহিলা, শিশু এবং বয়স্কদের উপহাস করা বক্তব্য বন্ধ করা যায়।

Advertisements

কৌতুকশিল্পীদের পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন যে, তারা ইতিমধ্যে কোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রকাশ করেছেন। তবে, বিচারপতি কান্ত সময় রায়নার প্রাথমিক হলফনামার সমালোচনা করে বলেন যে, তিনি প্রকৃত অনুশোচনার পরিবর্তে তার ক্রিয়াকলাপের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।

কোর্ট তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে যে, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে ক্ষমা প্রকাশ করার পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের প্রভাব ব্যবহার করবেন।

এই নির্দেশের পাশাপাশি, কোর্ট জানিয়েছে যে, পরবর্তী শুনানিতে এই কৌতুকশিল্পীদের জন্য জরিমানা বা শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিচারপতি কান্ত বলেন, “অনুতাপের মাত্রা অপরাধের মাত্রার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভবিষ্যতের জন্য এই পদক্ষেপ নিচ্ছি। কারও মর্যাদা লঙ্ঘন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

পুলিশের দাপটে রাজ্য চালাচ্ছেন মমতা! কটাক্ষ শুভেন্দুর

এই ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এক্স-এ পোস্টগুলিতে দেখা গেছে, অনেকে এই রায়কে সমর্থন করেছেন, বলেছেন যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীলতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এই রায়ের মাধ্যমে আগামী দিনে সোশ্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরির পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেই হতে পারে, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।