সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সোমবার একটি যুগান্তকারী রায়ে ভারতীয় সেনার জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল (জেএজি) বিভাগে মহিলাদের নিয়োগের উপর আরোপিত সীমাবদ্ধতা বাতিল করেছে। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি মনমোহনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই নীতিকে সমতার অধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছে যে, নিয়োগ শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
এই রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, পুরুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ বা মহিলাদের জন্য সীমিত আসন নির্ধারণ করা সংবিধানের ১৪ এবং ১৬ নং অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। এই রায় ভারতীয় সেনায় লিঙ্গভিত্তিক সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্ট এই রায় দিয়েছে দুই মহিলা প্রার্থী, অর্শনূর কৌর এবং আরেকজনের দায়ের করা একটি রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে। এই দুই প্রার্থী জেএজি এন্ট্রি স্কিমের (৩১তম কোর্স) জন্য আবেদন করেছিলেন এবং মেধাতালিকায় যথাক্রমে চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থান অর্জন করেছিলেন। কিন্তু, সেনার নীতি অনুযায়ী, জেএজি বিভাগে পুরুষদের জন্য ছয়টি এবং মহিলাদের জন্য মাত্র তিনটি আসন সংরক্ষিত ছিল।
ফলে, এই দুই মহিলা প্রার্থী, যারা পুরুষ প্রার্থীদের তুলনায় উচ্চতর মেধা অর্জন করেছিলেন, তারা নির্বাচিত হননি। তাঁরা এই লিঙ্গভিত্তিক আসন বণ্টনকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে রিট দায়ের করেন, যুক্তি দিয়ে বলেন যে এটি তাঁদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
বিচারপতি মনমোহন এবং দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ এই নীতিকে “অযৌক্তিক” এবং “সমতার অধিকারের লঙ্ঘন” বলে অভিহিত করেছেন। আদালত বলেছে, “জেএজি পদগুলি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ বলে দাবি করা হলেও, মহিলাদের জন্য কম আসন নির্ধারণ করা সংবিধানের চেতনার পরিপন্থী।”
বিচারপতি দত্ত প্রশ্ন তুলে বলেন, “যদি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে মহিলারা রাফাল যুদ্ধবিমান চালাতে পারেন, তাহলে সেনার বিচার বিভাগে তাঁদের নিয়োগে কেন সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হবে?” আদালত আরও বলেছে, “সত্যিকারের লিঙ্গ-নিরপেক্ষতার অর্থ হল মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন, ৫০:৫০ অনুপাত নয়। যদি দশজন মহিলা মেধার ভিত্তিতে যোগ্য হন, তাহলে তাঁদের সবাইকে নিয়োগ করতে হবে।”
সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে, অর্শনূর কৌরকে জেএজি বিভাগে নিয়োগ করতে হবে। তবে, দ্বিতীয় প্রার্থী, যিনি মামলা চলাকালীন ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগদান করেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে কোনও সুবিধা দেওয়া হয়নি।
আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে যে, সেনাকে পুরুষ ও মহিলা প্রার্থীদের জন্য একটি সমন্বিত মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। বিচারপতি মনমোহন বলেন, “এই ধরনের নীতি অনুসরণ করলে কোনও দেশ নিরাপদ থাকতে পারে না।”
কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল আইশ্বর্যা ভাটি যুক্তি দিয়েছিলেন যে, জেএজি পদগুলি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ এবং ২০২৩ সাল থেকে ৫০:৫০ নির্বাচন অনুপাত চালু করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সেনার বিভিন্ন শাখায় লিঙ্গভিত্তিক শূন্যপদ নির্ধারণ করা হয় যুদ্ধকালীন প্রয়োজনীয়তা।
জনশক্তি মূল্যায়নের ভিত্তিতে। তবে, আদালত এই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “লিঙ্গ-নিরপেক্ষতার অর্থ হল লিঙ্গ নির্বিশেষে মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন। পুরুষদের জন্য আসন সংরক্ষণ বা মহিলাদের জন্য কম আসন নির্ধারণ করা অযৌক্তিক।”
এই রায়কে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানানো হয়েছে। এক্স-এ একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায় লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে একটি বড় পদক্ষেপ।” অন্য একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “মহিলারা রাফাল চালাতে পারেন, তাহলে জেএজি বিভাগে কেন বৈষম্য?”
বিজেপি নেতা হেমাঙ্গ জোশী এই রায়কে “গণতন্ত্র ও সমতার জয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তবে, কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এই রায়ের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সেনার প্রশাসনিক কাঠামোতে চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।
SIR Protest: পুলিশ আটকাতেই ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে বাম সাংসদরা ঝাঁপালেন, ভাঙল ব্যারিকেড
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ভারতীয় সেনায় লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি কেবল জেএজি বিভাগেই নয়, সেনার অন্যান্য শাখাতেও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পথ প্রশস্ত করতে পারে। এই রায় মহিলা অফিসারদের মনোবল বাড়াবে এবং জাতীয় প্রতিরক্ষায় তাঁদের ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করবে।