রাজ্যে ওবিসি সংরক্ষণকে ঘিরে ফের আইনি জটিলতা তৈরি হলো। জয়েন্ট এন্ট্রান্স ও মেডিক্যাল প্রবেশিকা পরীক্ষায় ওবিসি (অন্য অনগ্রসর শ্রেণি) প্রার্থীদের জন্য আলাদা তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাই কোর্ট।
সেই রায়ের উপরই এবার কার্যত স্থগিতাদেশ জারি করল দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। ফলে কিছুটা হলেও কাটল অনিশ্চয়তার মেঘ, তবে পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে।
হাই কোর্টের নির্দেশ
সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ রায় দেয় যে, জয়েন্ট এন্ট্রান্স এবং মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ওবিসি প্রার্থীদের আলাদা একটি প্যানেল তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ সংরক্ষণের সুবিধা পেতে হলে নতুনভাবে তালিকা তৈরি করে প্রার্থীদের নাম সেই তালিকায় রাখতে হবে। আদালতের মতে, বর্তমান তালিকা তৈরি ও যাচাইয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট অসঙ্গতি রয়েছে। তাই প্রার্থীদের সঠিকভাবে সুবিধা পৌঁছে দিতে নতুন প্যানেল তৈরিই ছিল একমাত্র সমাধান।
এই রায়ের ফলে হঠাৎ করে বিপাকে পড়েছিলেন বহু পরীক্ষার্থী। কারণ, নতুন প্যানেল তৈরি হলে ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল প্রবল। একই সঙ্গে পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তি প্রক্রিয়াও ঝুলে যেত। চিকিৎসা বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাওয়া বহু ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবক স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগে ভুগছিলেন।
সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, আপাতত হাই কোর্টের নির্দেশ কার্যকর হবে না। অর্থাৎ, নতুন করে কোনও তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে না। বিদ্যমান ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেই ভর্তি প্রক্রিয়া এগোবে। আদালতের এই হস্তক্ষেপে বহু পরীক্ষার্থী কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ, তাঁদের ভর্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার জালে আর আটকে থাকছে না।
তবে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও মামলাটি এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে শুনানি চলবে। তখন বিস্তারিতভাবে ঠিক হবে, সংরক্ষণ কার্যকর করার ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া কী হবে এবং বিদ্যমান তালিকাই কি যথেষ্ট, নাকি নতুন তালিকার প্রয়োজন আছে।
পরীক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া
এই রায় নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। একাংশ পরীক্ষার্থী মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশে অন্তত ভর্তি প্রক্রিয়া আটকে থাকছে না, যা তাঁদের পক্ষে ইতিবাচক। অন্যদিকে কয়েকজন প্রার্থী বলছেন, হাই কোর্টের নির্দেশ যথাযথ ছিল, কারণ তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে অসঙ্গতি দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। তাই সঠিক ন্যায্যতা পেতে হলে নতুন তালিকার প্রয়োজন ছিল।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে শুধু আদালতেই নয়, রাজনৈতিক অঙ্গনেও চাপানউতোর চলছে। রাজ্যের শাসকদল থেকে বিরোধীরা—সব পক্ষই এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে তুলেছে। সংরক্ষণ প্রসঙ্গ সাধারণ মানুষের জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে, তাই আদালতের রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও তীব্র। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ইস্যু আরও বড় আকার নিতে পারে।
ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা
এখন প্রশ্ন উঠছে, পরবর্তী শুনানিতে আদালত কী সিদ্ধান্ত নেয়। যদি নতুন তালিকা তৈরির নির্দেশ বহাল থাকে, তাহলে আবারও ভর্তি প্রক্রিয়ায় দেরি হতে পারে। আবার বিদ্যমান তালিকাই যদি যথেষ্ট বলে আদালত মেনে নেয়, তবে পরিস্থিতি সহজ হবে। তবে যে কোনও অবস্থাতেই পরীক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।