সোমবার ১ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) ২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রিত পেট্রোল (E20) এর দেশব্যাপী প্রয়োগের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলা (PIL) খারিজ করে দিয়েছে। আবেদনকারী অভিযোগ করেছিলেন যে, লক্ষ লক্ষ গাড়িচালক তাদের গাড়ির জন্য উপযুক্ত নয় এমন জ্বালানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ ইথানল-মুক্ত পেট্রোল (E0) পাওয়ার কোনও বিকল্প নেই।
তবে, প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কে ভিনোদ চন্দ্রনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি গ্রহণ করে এই আবেদন খারিজ করে। সরকার জানিয়েছে, E20 জ্বালানি নীতি কৃষকদের, বিশেষ করে আখচাষিদের আয় বাড়ায় এবং বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় করে। এই রায় রাজ্য রাজনীতি ও পরিবেশ নীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
আবেদনকারী, অ্যাডভোকেট অক্ষয় মালহোত্রা, তাঁর পিআইএল-এ দাবি করেছেন যে, ২০২৩ সালের এপ্রিলের আগে তৈরি গাড়ি এবং এমনকি কিছু নতুন বিএস-৬ মডেলের গাড়িও E20 জ্বালানির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি আরও বলেন, এই জ্বালানি ইঞ্জিনের ক্ষয়, জ্বালানি দক্ষতা হ্রাস এবং মেরামতের খরচ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে।
এছাড়া, ইথানল মিশ্রিত জ্বালানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির বীমা দাবি প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে, যা গ্রাহকদের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ। আবেদনে পেট্রোল পাম্পে ইথানলের পরিমাণ স্পষ্টভাবে লেবেল করার এবং গ্রাহকদের তাদের গাড়ির সামঞ্জস্যতা সম্পর্কে অবহিত করার দাবি জানানো হয়েছিল। মালহোত্রা বলেন, “আমরা E20 নীতির বিরোধী নই, তবে গ্রাহকদের ইথানল-মুক্ত পেট্রোলের বিকল্প দেওয়া উচিত।”
তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইথানল-মুক্ত পেট্রোল পাওয়া যায় এবং পাম্পে জ্বালানির গঠন স্পষ্টভাবে প্রদর্শিত হয়।কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমণি এই আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, “কোনও বাইরের শক্তি কি ভারতের জ্বালানি নীতি নির্ধারণ করবে?” তিনি যুক্তি দেন যে, E20 নীতি আখচাষিদের উপকার করে এবং জ্বালানি আমদানি হ্রাস করে পরিবেশগত স্থায়িত্ব ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসে।
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয় নীতি আয়োগের একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলেছে, E20 জ্বালানি ভালো ত্বরণ এবং ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা প্রদান করে এবং E10 জ্বালানির তুলনায় কার্বন নিঃসরণ ৩০ শতাংশ কমায়। মন্ত্রণালয় আরও দাবি করেছে, E20 জ্বালানির কারণে জ্বালানি দক্ষতার উল্লেখযোগ্য হ্রাসের অভিযোগ “ভিত্তিহীন”।
নীতি আয়োগের ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, E20 জ্বালানি চার চাকার গাড়িতে ৬-৭% এবং দুই চাকার গাড়িতে ৩-৪% দক্ষতা হ্রাস করতে পারে, তবে এটি ইঞ্জিন ক্রমাঙ্কনের মাধ্যমে হ্রাস করা যায়।আবেদনে আরও বলা হয়, E20 জ্বালানির বাধ্যতামূলক প্রয়োগ ভোক্তা সুরক্ষা আইন, ২০১৯-এর অধীনে অবহিত পছন্দের অধিকার লঙ্ঘন করে।
পেট্রোল পাম্পে ইথানলের পরিমাণ প্রকাশ না করা এবং গ্রাহকদের গাড়ির সামঞ্জস্যতা সম্পর্কে না জানানো ভোক্তাদের অধিকারের উপর আঘাত বলে দাবি করা হয়। এছাড়া, আবেদনকারী অ-সঙ্গতিপূর্ণ গাড়িতে E20 জ্বালানির প্রভাব নিয়ে একটি দেশব্যাপী অধ্যয়নের দাবি জানিয়েছিলেন। তবে, সুপ্রিম কোর্ট এই যুক্তিগুলি গ্রহণ করেনি এবং আবেদন খারিজ করে দেয়।
এই রায়ের পর সামাজিক মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। একজন গ্রাহক লিখেছেন, “যদি E20 আমার E10 গাড়ির জন্য ঠিক হয়, তবে নির্মাতারা কেন এটি নিশ্চিত করছে না?” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “আগামীকাল হয়তো আমাদের গাড়িতে ৫০% ইথানল ব্যবহার করতে বলা হবে।”
তবে, সরকার ও শিল্প সংস্থাগুলি, যেমন অটোমোটিভ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া (ARAI) এবং সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (SIAM), E20 জ্বালানির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। তারা বলছে, জ্বালানি দক্ষতায় ২-৪% হ্রাস সত্ত্বেও এর জাতীয় সুবিধা অনেক বেশি।
প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ড ইউজার? সর্বাধিক সুবিধা পেতে চান? রইল ৪টি স্মার্ট টিপস
এই রায়ের মাধ্যমে ভারতের E20 জ্বালানি নীতি অব্যাহত থাকবে। তবে, ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং পুরোনো গাড়ির সামঞ্জস্যতা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। আগামী দিনে এই নীতির বাস্তবায়ন কীভাবে এগিয়ে যায়, তা নিয়ে সকলের নজর থাকবে।