সুপ্রিম কোর্ট আজ বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে বড় নির্দেশ দিয়েছে (Supreme Court)। সুপ্রিম নির্দেশে বলা হয়েছে বিহারে চলতি বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত মামলায় রাজনৈতিক দলগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং দাবি ও আপত্তি জমার বিষয়ে একটি স্থিতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
এছাড়াও, নির্বাচন কমিশন অফ ইন্ডিয়াকে (ECI) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টদের (BLA) জমা দেওয়া দাবিগুলির জন্য স্বীকৃতি রসিদ প্রদান করতে হবে।
এই নির্দেশ বিহারের নির্বাচনী তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে, যা সম্প্রতি ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার কারণে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং জয়মাল্য বাগচীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ বিহারের SIR প্রক্রিয়া নিয়ে শুনানি করে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, বিহারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলিকে এই মামলায় পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এছাড়াও, ১ আগস্ট ২০২৫-এ প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকার পর দাবি ও আপত্তি জমার বিষয়ে একটি বিস্তারিত স্থিতি রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আদালত আরও বলেছে, রাজনৈতিক দলগুলির বুথ লেভেল এজেন্টদের জমা দেওয়া প্রতিটি দাবির জন্য ECI-কে অবশ্যই স্বীকৃতি রসিদ প্রদান করতে হবে, যাতে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ এবং জবাবদিহিমূলক হয়।
বিহারে SIR প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খসড়া ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত, ৩৬ লক্ষ স্থায়ীভাবে বিহারের বাইরে চলে যাওয়া এবং ৭ লক্ষ ভোটারের নাম একাধিক নির্বাচনী এলাকায় পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই বাদ দেওয়ার কারণগুলি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছে, “ভোটারদের জানার অধিকার রয়েছে।” এই তালিকা জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের (DEO) ওয়েবসাইটে এবং মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে, যা ইপিআইসি (EPIC) নম্বরের মাধ্যমে অনুসন্ধানযোগ্য হবে।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ রাজনৈতিক দলগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের বুথ লেভেল এজেন্টরা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ECI-এর তথ্য অনুযায়ী, বিহারে ১,৬০,৮১৩ বুথ লেভেল এজেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে বিজেপির ৫৩,৩৩৮, আরজেডি-র ৪৭,৫০৬, জেডি(ইউ)-র ৩৬,৫৫০ এবং কংগ্রেসের ১৭,৫৪৯ এজেন্ট রয়েছে।
এই এজেন্টরা ভোটার তালিকার ত্রুটি শনাক্ত করতে এবং দাবি ও আপত্তি জমা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুপ্রিম কোর্ট জোর দিয়েছে যে, ভোটারদের তথ্য জানার অধিকার রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের উপর নির্ভর করবে না। তাই, ECI-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, প্রতিটি দাবির জন্য স্বীকৃতি রসিদ প্রদান করতে হবে, যাতে এজেন্টরা তাদের জমা দেওয়া দাবিগুলির স্থিতি ট্র্যাক করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন, “যদি ৬৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ২২ লক্ষ মৃত বলে দাবি করা হয়, তবে তাদের নাম কেন প্রকাশ করা হচ্ছে না? পরিবারের সদস্যরা জানেন না যে তাদের আত্মীয়ের নাম মৃত হিসেবে বাদ দেওয়া হয়েছে।” আদালত আরও বলেছে, এই তালিকা পঞ্চায়েত ভবন, ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং বুথ লেভেল অফিসারদের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে।
যাতে সাধারণ মানুষ সহজেই তথ্য পেতে পারে। এছাড়াও, আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, বাদ পড়া ভোটাররা তাদের দাবি জমা দেওয়ার সময় আধার কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন, যা এই প্রক্রিয়ায় প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত হয়েছে।
এই নির্দেশের পর বিহারের রাজনৈতিক দলগুলি মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। আরজেডি নেতা সুরেন্দ্র রাম অভিযোগ করেছেন যে, খসড়া তালিকায় অনেক মৃত ভোটারের নাম রয়েছে, কিন্তু প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
সিপিআই(এমএল)-লিবারেশনের একজন বুথ লেভেল এজেন্ট দাবি করেছেন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে একজন বুথ লেভেল অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদিকে, ECI দাবি করেছে যে, তারা এখনও রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পায়নি, যদিও ৮,৩৪১ জন ভোটার সরাসরি দাবি ও আপত্তি জমা দিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ বিহারের SIR প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। রাজনৈতিক দলগুলিকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং দাবির জন্য স্বীকৃতি রসিদ প্রদানের নির্দেশ ভোটারদের অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে।
এশিয়া কাপে নেই, নেতৃত্বে আসবেন? তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে মুখ খুললেন বোর্ড সচিব
আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাবি ও আপত্তি জমার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে, যা বিহার বিধানসভা নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমাদের সাথে থাকুন আরও সর্বশেষ খবরের জন্য।