সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক উঠেছে। সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে গুজরাত হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতি জাস্টিস এন.ভি. আঞ্জারিয়া, জাস্টিস বিজয় বিষ্ণোই এবং জাস্টিস জে.বি. পারদিওয়ালা কে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ করা হয়েছে।
এই নিয়োগের ফলে গুজরাত হাইকোর্টের প্রতিনিধিত্ব সুপ্রিম কোর্টে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব এবং লিঙ্গ বৈচিত্র্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে, কলেজিয়ামের একমাত্র মহিলা সদস্য জাস্টিস বিভি নাগরাথনা এই নিয়োগের প্রক্রিয়ায় তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন, যা বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার উপর নতুন আলোকপাত করেছে।
২০২৫ সালের ২৬ মে কলেজিয়াম, প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাইয়ের নেতৃত্বে, জাস্টিস এন.ভি. আঞ্জারিয়া, বিজয় বিষ্ণোই এবং এএস চান্দুরকরের নাম সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। কেন্দ্রীয় সরকার ২৯ মে এই সুপারিশ অনুমোদন করে এবং ৩০ মে তিনজন বিচারপতি শপথ গ্রহণ করেন।
এই নিয়োগের ফলে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ৩৪-এ পৌঁছেছে, যা এর পূর্ণ ক্ষমতা। জাস্টিস আঞ্জারিয়া গুজরাত হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এবং জাস্টিস পারদিওয়ালা বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে গুজরাত হাইকোর্টের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র বিচারপতি ছিলেন।
জাস্টিস বিষ্ণোই, যিনি গৌহাটি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তিনি রাজস্থানের বাসিন্দা হলেও তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু গুজরাতে। এই তিনজনের নিয়োগ গুজরাত হাইকোর্টের প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করেছে।
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে জাস্টিস বিভি নাগরাথনার আপত্তি। তিনি কলেজিয়ামের সভায় জাস্টিস বিপুল এম পঞ্চোলির সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। পঞ্চোলি, যিনি বর্তমানে পাটনা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং গুজরাত হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি, তাঁর নিয়োগের বিরুদ্ধে নাগরাথনা আঞ্চলিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি উত্থাপন করেন।
তিনি জানান, গুজরাত থেকে ইতিমধ্যে তিনজন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে রয়েছেন, যেখানে দেশের ছয়টি হাইকোর্ট—জম্মু ও কাশ্মীর, ছত্তিশগড়, উত্তরাখণ্ড, মণিপুর, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা এর কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। নাগরাথনার মতে, এই নিয়োগ আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্যকে আরও ব্যাহত করবে।
এছাড়া, নাগরাথনা সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতিদের প্রতিনিধিত্বের অভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাস্টিস বেলা এম ত্রিবেদীর জুন মাসে অবসরের পর নাগরাথনাই বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের একমাত্র মহিলা বিচারপতি। কলেজিয়ামের সাম্প্রতিক সুপারিশে কোনো মহিলা বিচারপতির নাম প্রস্তাবিত হয়নি, যা তাঁর আপত্তির আরেকটি কারণ।
এই বিতর্ক রাজনৈতিক ও আইনি মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। কিছু আইনজীবী এবং রাজনৈতিক নেতা মনে করেন, গুজরাতের অতিরিক্ত প্রতিনিধিত্ব সরকারের পক্ষপাতমূলক নীতির ইঙ্গিত দেয়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই নিয়োগকে বিচার বিভাগের শক্তিশালীকরণের পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “কলেজিয়ামের সুপারিশ অনুযায়ী তিনজন বিচারপতির নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন করা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের কার্যকারিতা বাড়াবে।”
উৎসবমুখর শহরে যাত্রীদের জন্য নতুন চমক শপিং স্পেশাল বাস
সুপ্রিম কোর্টে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব একটি সংবেদনশীল বিষয়। সুপ্রিম কোর্টের নথি অনুযায়ী, “আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব” বিচারপতি নিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড, যদিও এটি কীভাবে গণনা করা হয় তা স্পষ্ট নয়। বর্তমানে, গুজরাত, রাজস্থান এবং বোম্বে হাইকোর্টের প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকলেও, অনেক হাইকোর্টের কোনো প্রতিনিধি নেই। এই ভারসাম্যহীনতা বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।