ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলির খয়রাতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) তীব্র মন্তব্য করেছে। একটি মামলার শুনানির সময় বিচারপতি বি আর গভাই এবং এজি মাসিহরের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, এই ধরনের খয়রাতি ঘোষণা দেশের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষত মহারাষ্ট্রে বিজেপির ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্পের উদাহরণ তুলে এনে বিচারপতিরা বলেন, ভোটের আগে এই ধরনের খয়রাতি ঘোষণা মানুষের মধ্যে কাজ করার ইচ্ছা কমিয়ে দিচ্ছে।
শহুরে এলাকায় গৃহহীনদের বাসস্থানের অধিকার নিয়ে একটি মামলার শুনানি চলছিল। সেই সময় বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, “মানুষকে সমাজের মূলস্রোতে নিয়ে আসা তো দূরের কথা, আমরা এখন একটি পরজীবী শ্রেণি তৈরি করছি। এই খয়রাতি ঘোষণা করে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া, টাকা দেওয়া, এতে মানুষের মধ্যে কাজ করার ইচ্ছা কমে যাচ্ছে।” তারা আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলি মানুষের কথা ভাবছে, তবে তাদেরকে মূলস্রোতে যুক্ত করে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।”
এই মন্তব্যের পর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, “যতটুকু আমি জানি, দেশে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম যারা কাজ পেলে কাজ করবেন না।” তবে বিচারপতি গভাই এর সঙ্গে সহমত হননি। তিনি বলেন, “আমি কৃষক পরিবারের মানুষ। তবে মহারাষ্ট্রে খয়রাতির কারণে এখন কৃষিকাজের জন্য লোক মেলে না।”
এই মন্তব্য একেবারে নতুন নয়। এর আগেও সুপ্রিম কোর্ট দেশের মধ্যে খয়রাতি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। ২০১৩ সালে একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, সরকারের কর্তব্য হল দেশের মানুষের অবস্থার উন্নতি করা। আদালত জানিয়েছিল, যদি সরকার মানুষের জন্য কিছু সুবিধা দেয়, তবে সেই ক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।
তবে, এই খয়রাতি বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একাধিকবার বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিজেপি, কংগ্রেস এবং আম আদমি পার্টি (আপ) একে অপরকে বিভিন্ন সময়ে তোপ দেগেছে। বিজেপি যখন ‘লড়কি বহিন’ প্রকল্প ঘোষণা করেছিল, তখন কংগ্রেস এবং আপ তাদের খয়রাতি নীতির সমালোচনা করেছিল। তাদের মতে, এই ধরনের প্রকল্পগুলি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
খয়রাতি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্যও রাজনৈতিক মহলে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কিন্তু এই ধরনের খয়রাতি প্রকল্পগুলি যদি মানুষকে বিনামূল্যে সুবিধা দেয়, তাহলে কাজ করার ইচ্ছা কমে যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলি এই মন্তব্যের পর নিজেদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে। যদিও তাদের দাবি, তারা মানুষের স্বার্থে কাজ করছে। তবে, সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, বিনামূল্যে সাহায্য দেওয়ার চেয়ে, মানুষের মধ্যে কর্মচঞ্চলতা সৃষ্টি করে তাদের দেশের উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া জরুরি।
রাজনৈতিক দলগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খয়রাতি প্রকল্পের সমালোচনা বরাবরই করা হয়, তবে নির্বাচনের সময় এই ধরনের প্রকল্পগুলি জনপ্রিয়তা বাড়ানোর জন্য চালানো হয়। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষণস্থায়ী সুবিধা তৈরি হলেও, দীর্ঘমেয়াদী উন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
তবে, সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। রাজনৈতিক দলগুলির উচিত মানুষের মধ্যে কাজ করার মনোভাব তৈরি করা, যাতে তারা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলি যদি মানুষের উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়, তবে তা দেশ ও সমাজের জন্য আরো কার্যকরী হবে।
সংক্ষেপে, সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিত্রের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক দলগুলির উচিত শুধু ভোটের জন্য নয়, বরং দেশের উন্নয়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।