নয়াদিল্লি: বাল্য বিবাহ নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন (পিসিএমএ) সব ধর্মের উপর একীভূতভাবে প্রয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের আবেদন খারিজ করেছে। এই রায়ে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত ধর্মীয় আইনের উপর পিসিএমএ প্রাধান্য পাবে না। এই সিদ্ধান্ত শুক্রবার নেওয়া হয়েছে, যা দেশের বাল্যবিবাহ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এই রায় শিশু অধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার প্রশ্ন তুলেছে, যা সমাজের বিভিন্ন মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল যে, ২০০৬ সালের পিসিএমএ আইন সব ধর্মের উপর সমানভাবে প্রয়োগ করা হোক, যাতে বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হয়। এই আইনে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে নিষিদ্ধ।
ভোট এগিয়ে আসতেই বেপাত্তা রাহুল! হাইকমান্ডের অনুপস্থিতিতে ভুগছে দল?
কিন্তু বিভিন্ন ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন, বিশেষ করে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন, বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে কিছু ছাড় দেয়, যা পিসিএমএ-এর সাথে সাংঘর্ষিক। কেন্দ্রের দাবি ছিল, ধর্মীয় আইনের এই ছাড় বাতিল করে সবার জন্য একটি সর্বজনীন আইন প্রয়োগ করা হোক। তবে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত আইনের অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অংশ।
এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করা সংবিধানের ২৫ ও ২৬ ধারার লঙ্ঘন হবে।বিচারপতিরা তাদের রায়ে বলেছেন, “বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক অভিশাপ, এবং এটি নির্মূল করতে হবে। তবে, ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইনের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে সংবিধানের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি।” আদালত পরামর্শ দিয়েছে যে, বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং শিক্ষার প্রসারই প্রকৃত সমাধান।
এই রায়ে পিসিএমএ-এর গুরুত্ব অস্বীকার করা হয়নি, তবে এটি ব্যক্তিগত আইনের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না বলে স্পষ্ট করা হয়েছে। আদালত আরও বলেছে, “সংস্কারের জন্য সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোচনা এবং সম্মতি প্রয়োজন, জোরপূর্বক আইন প্রয়োগ নয়।” এই রায়ে শিশু অধিকার সংগঠনগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে। জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের একজন প্রতিনিধি বলেন, “বাল্যবিবাহ শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানসিক বিকাশে বাধা।
এই রায় আমাদের লড়াইকে পিছিয়ে দেবে।” ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে এখনও ২৩ শতাংশ মেয়ের বিয়ে ১৮ বছরের আগে হয়, এবং এটি গ্রামীণ এলাকায় বেশি। বিশেষ করে, মুসলিম এবং কিছু অন্যান্য সম্প্রদায়ে ধর্মীয় আইনের কারণে বাল্যবিবাহ চলছে। এই রায়ের ফলে এই প্রথা চালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে গেছে, যা শিশু অধিকার কর্মীদের উদ্বিগ্ন করেছে।
অন্যদিকে, ধর্মীয় নেতারা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের একজন মুখপাত্র বলেন, “এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার জয়। ব্যক্তিগত আইন আমাদের পরিচয়ের অংশ।” তবে, তারা বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই রায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বিভাজন সৃষ্টি করেছে।
বিজেপি এই রায়কে ‘ধর্মীয় সংবেদনশীলতার প্রতি সম্মান’ বলে সমর্থন করেছে, যখন কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল বলছে, এটি শিশু অধিকারের প্রতি পশ্চাদপসরণ। কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেন, “ধর্মীয় স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু শিশুদের সুরক্ষা তার চেয়েও বড়। এই রায় হতাশাজনক।”


