ভারতের সর্বোচ্চ আদালত (Supreme Court) কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে একটি খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং সেটি আদালতের সামনে পেশ করতে হবে। একইসঙ্গে বিচারপতি সুর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে এই নীতিমালা প্রণয়ন অবশ্যই সংবাদ সম্প্রচার মানদণ্ড কর্তৃপক্ষের (News Broadcasting Standards Authority বা NBSA) সঙ্গে পরামর্শ করে তৈরি করতে হবে।
আদালত (Supreme Court) এদিনের শুনানিতে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সামাজিক মাধ্যমে ‘অবাধ মতপ্রকাশের বাণিজ্যিকীকরণ’ নিয়ে। বিচারপতিরা বলেছেন, অসংখ্য ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট নির্মাতা আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছেন। ফলত, অসংলগ্ন, বিভ্রান্তিকর বা কখনও কখনও ক্ষতিকারক তথ্যের প্রসার ঘটছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমাজের প্রান্তিক ও সংবেদনশীল জনগোষ্ঠী—যেমন প্রতিবন্ধী মানুষ, নারী, শিশু, প্রবীণ নাগরিক ও সংখ্যালঘুরা।
আদালতের পর্যবেক্ষণ
বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে বটে, তবে এই স্বাধীনতারও একটি সীমারেখা রয়েছে। যখন এই স্বাধীনতা বাণিজ্যিক মুনাফার হাতিয়ার হয়ে ওঠে, তখন সমাজে ভারসাম্যহীনতা ও অরাজকতা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে মিথ্যা খবর, ভুয়ো তথ্য, বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ও চরিত্রহননের মতো বিষয়গুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যার প্রভাব ভয়াবহ।
বিচারপতিরা উদাহরণ টেনে বলেন, আজকের দিনে শিশুরাও অবাধে স্মার্টফোন ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছে। কোনও ধরণের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কনটেন্ট তাদের সামনে পৌঁছে গেলে তা তাদের মানসিক বিকাশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে, প্রবীণ নাগরিক বা প্রতিবন্ধী মানুষের ক্ষেত্রেও বিভ্রান্তিকর বার্তা তাঁদের সুরক্ষা ও মর্যাদার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কেন্দ্রের ভূমিকা
শীর্ষ আদালত (Supreme Court) এদিন কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে যে দ্রুত একটি খসড়া গাইডলাইন তৈরি করতে হবে এবং সেই নীতিমালায় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলির করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। আদালতের মতে, এটি শুধু মতপ্রকাশের সীমারেখা নির্ধারণই করবে না, বরং ব্যবহারকারীর সুরক্ষা, তথ্যের স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতাও নিশ্চিত করবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবী আদালতে জানান যে সরকার ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট মহলের মতামত নিয়ে একটি প্রাথমিক কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিয়েছে, শুধু খসড়া নয়, সেই নীতিমালার বাস্তবায়নযোগ্য রূপও দেখতে চায় আদালত।
বাণিজ্যিক প্রভাবের প্রশ্ন
আদালতের অন্যতম প্রধান উদ্বেগ হলো, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের বাড়বাড়ন্ত ও তাদের প্রভাবিত কনটেন্টের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য। বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড প্রোমোশন কিংবা ভুয়ো প্রচারণা—সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। এতে গণতন্ত্রের সুস্থ মতামত প্রকাশের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে আদালতের পর্যবেক্ষণ।
পরবর্তী পদক্ষেপ
এদিন আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে পরবর্তী শুনানি নভেম্বর মাসে হবে। তার আগে কেন্দ্রকে অবশ্যই খসড়া নির্দেশিকা আদালতের নথিভুক্ত করতে হবে।
কেন বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে একটি। কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, এক্স (টুইটার) বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করেন। ফলে কোনও বিভ্রান্তিকর বা মিথ্যা বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তা কেবল ব্যক্তি নয়, গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে শীর্ষ আদালতের নির্দেশ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।