সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court) সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে অ্যাড-হক বা অস্থায়ী নিয়োগের প্রবণতার জন্য কড়া সমালোচনা করেছে। আদালত বলেছে, “নিয়মিত শ্রম নিষ্কাশনের জন্য অস্থায়ী নিয়োগের প্রথা মানুষের আস্থা ক্ষয় করে।” এই মন্তব্য এসেছে গত ১৮ আগস্ট, ২০২৫-এ একটি মামলার শুনানির সময়।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই মামলায় সরকারি চাকরিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অ্যাড-হক নিয়োগের প্রথাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে। আদালতের এই মন্তব্য সরকারি চাকরিতে স্থায়ী নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা এবং কর্মীদের নিরাপত্তার উপর জোর দিয়েছে।
এই মামলাটি এসেছে গুজরাটে অ্যাড-হক ভিত্তিতে নিযুক্ত শিক্ষকদের নিয়মিতকরণের দাবি নিয়ে। আদালত দেখেছে যে, বহু কর্মী বছরের পর বছর অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন, কিন্তু তাঁদের স্থায়ী নিয়োগ বা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, “এই ধরনের অ্যাড-হকিজম শুধু কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করে না, বরং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতাও ক্ষতিগ্রস্ত করে।” আদালত জানিয়েছে, এই প্রথা সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা তৈরি করে।
সরকারি চাকরিতে অ্যাড-হক নিয়োগের প্রথা বহু বছর ধরে চলে আসছে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ করা হয়, যাঁরা কম বেতন এবং সুবিধা ছাড়াই কাজ করেন। সুপ্রিম কোর্টের মতে, এই কর্মীরা নিয়মিত কর্মীদের সমান দায়িত্ব পালন করেন, কিন্তু তাঁদের চাকরির নিরাপত্তা, পেনশন, বা অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয় না। এটি তাঁদের মানসিক ও আর্থিক চাপের মুখে ফেলে। আদালত বলেছে, “একজন কর্মী যদি বছরের পর বছর একই কাজ করেন, তবে তাঁকে অস্থায়ী বলে গণ্য করা অন্যায়।”
সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে, অ্যাড-হক নিয়োগের প্রথা কমাতে এবং স্থায়ী নিয়োগের জন্য স্বচ্ছ ও সময়োপযোগী প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে। আদালত জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অস্থায়ী কর্মীদের নিয়মিতকরণের জন্য বিশেষ নীতি তৈরি করা উচিত।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, “অ্যাড-হক নিয়োগ কেবল কর্মীদের শোষণ করে না, বরং প্রশাসনিক দক্ষতার উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।” তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা আনতে হবে।
এই রায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লক্ষ লক্ষ অস্থায়ী কর্মী কাজ করছেন, যাঁদের মধ্যে শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী অন্যতম। এই কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিতকরণের দাবি জানিয়ে আসছেন।
সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্য তাঁদের আন্দোলনকে আরও শক্তি দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, এই রায় বাস্তবায়নের জন্য সরকারের উপর চাপ বাড়বে, কারণ স্থায়ী নিয়োগের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা এবং পরিকাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন।
এই রায়ের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কর্মী সংগঠন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, সরকার অ্যাড-হক নিয়োগের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা দাবি করেছে, সরকারকে দ্রুত স্থায়ী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। অস্থায়ী কর্মীদের সংগঠনগুলো এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটি আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের জয়।”
সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অস্থায়ী কর্মীদের জন্য ন্যায়বিচার। সরকারকে এখন নিয়মিত নিয়োগের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।” তবে, এই ধরনের পোস্টের তথ্য যাচাই করা যায়নি।
উপরাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী বিচারপতির বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের অস্ত্র সলওয়া জুডুম?
সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে যে, অ্যাড-হক নিয়োগের বিকল্প হিসেবে স্থায়ী নিয়োগের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে নীতি তৈরি করতে হবে। আদালত বলেছে, এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা অস্থায়ী কর্মীদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নিয়মিতকরণের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। এই রায়ের ফলে বিভিন্ন রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপ বাড়বে।