নয়াদিল্লি: আজকের ডিজিটাল যুগে হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সাম্প্রতিক একটি রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই অ্যাপগুলোর অ্যাক্সেস কোনো মৌলিক অধিকার নয়। একজন ডাক্তারের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট আনব্লক করার আবেদন খারিজ করে আদালত বলেছে, বেসরকারি প্ল্যাটফর্মের নিয়ম মেনে চলতে হবে।
টিকিট বণ্টন নিয়ে উত্তেজনা চরমে: নীতীশ কুমারের সরকারি বাসভবন ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
তা না হলে বিকল্প অ্যাপ ব্যবহার করুন। আর এই বিকল্প হিসেবে আদালত সরাসরি ভারতীয় অ্যাপ ‘আরত্তাই’র নাম উল্লেখ করে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে সমর্থন করেছে। এই রায় শুধু ডিজিটাল অধিকারের সীমা নির্ধারণ করেনি, বরং দেশীয় প্রযুক্তির প্রসারে নতুন আলোড়ন তুলেছে।ঘটনার সূত্রপাত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে। দিল্লির একজন বিশিষ্ট ডাক্তার, ড. রমণ কুন্দ্রা, হঠাৎ তার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে যায়।
গত ১০-১২ বছর ধরে তিনি এই অ্যাপ ব্যবহার করে রোগীদের সাথে যোগাযোগ করছিলেন, চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছিলেন এবং জরুরি কেস ম্যানেজ করছিলেন। অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ায় তার পেশাগত জীবন প্রায় থেমে যায়। কোম্পানির রিভিউ রিকোয়েস্ট করেও কোনো লাভ হয়নি; হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ থাকবে। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ড. কুন্দ্রা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন।
তার আইনজীবী, সিনিয়র অ্যাডভোকেট মহালক্ষ্মী পাভানি, যুক্তি দেন যে এই ব্লকিং তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেছে—বিশেষ করে অভিব্যক্তির স্বাধীনতা (আর্টিকেল ১৯) এবং জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা (আর্টিকেল ২১)। তারা আরও দাবি করেন যে, সোশ্যাল মিডিয়া ইন্টারমিডিয়ারিদের জন্য সারাদেশিক নির্দেশিকা তৈরি করা উচিত, যাতে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড বা ব্লক করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, সমানুপাতিকতা এবং যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত হয়।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ—জাস্টিস বিক্রম নাথ এবং জাস্টিস সন্দীপ মেহতা—এই যুক্তিকে একেবারেই খারিজ করে দেন। ১০ অক্টোবরের শুনানিতে জাস্টিস মেহতা সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, “হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাক্সেস করার মৌলিক অধিকার কী আপনার?” তিনি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ একটি বেসরকারি কোম্পানি, এবং তার নিয়ম-কানুন মেনে চলা ব্যবহারকারীদের দায়িত্ব।
সংবিধানের অধীনে কোনো ব্যক্তির এমন কোনো গ্যারান্টি নেই যে, তিনি যেকোনো প্রাইভেট প্ল্যাটফর্মের সার্ভিস অবাধে ব্যবহার করবেন। জাস্টিস নাথ যোগ করেন, “অন্যান্য কমিউনিকেশন অ্যাপ আছে, সেগুলো ব্যবহার করুন। এই অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহারের প্রসঙ্গে তিনি জোহো কোম্পানির আরত্তই এর নাম উল্লেখ করেন এবং বলেন ভারত এখন মেক ইন ইন্ডিয়াতে বিশ্বাসি তাই প্রত্যেকের উচিত স্বদেশী অ্যাপ ব্যবহার করা।