নয়াদিল্লি: দূষণ রুখতে কঠোর নির্দেশনার মধ্যেও উৎসবের আবহ বজায় রেখে সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি ও এনসিআর অঞ্চলে সবুজ আতসবাজি (Green Crackers) পোড়ানোর অনুমতি দিল। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৮ থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সীমিত সময়ের মধ্যে এই আতসবাজি ব্যবহার করা যাবে। দীপাবলির আগের দিন ও দীপাবলির দিনে সকাল ৬টা থেকে ৭টা এবং রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সবুজ আতসবাজি পোড়ানো যাবে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, এটি একটি “সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত” — যাতে উৎসবের আনন্দে বাঁধা না পড়ে, আবার পরিবেশও অতিরিক্ত ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আদালত আরও জানায়, দিল্লি-এনসিআর অঞ্চলে বাইরে থেকে আনা অবৈধ আতসবাজি দূষণের প্রধান কারণ। সেই কারণে রাজধানীতে বাইরে থেকে আনা আতসবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
যদি কোনো সংস্থা নকল গ্রীন ক্র্যাকার তৈরি করে বলে প্রমাণিত হয়, তবে তাদের উৎপাদন লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে আদালত।
সবুজ আতসবাজি তৈরি করেছে CSIR-NEERI (National Environmental Engineering Research Institute)। প্রচলিত আতসবাজির তুলনায় এগুলিতে কাঁচামালের ব্যবহার কম, শেলের আকার ছোট, এবং এতে ছাই (ash) ব্যবহার করা হয় না। পাশাপাশি, ধুলো নিয়ন্ত্রণকারী অ্যাডিটিভস ব্যবহার করা হয় যা বাতাসে ধূলিকণা, সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমায়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রচলিত আতসবাজিতে থাকা বিষাক্ত ধাতব যৌগের পরিবর্তে সবুজ আতসবাজিতে কম ক্ষতিকর বিকল্প যৌগ ব্যবহার করা হয়। ফলে বাতাসে দূষণকারী কণার পরিমাণ প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
CSIR-NEERI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, সাধারণ আতসবাজিতে থাকা ভারী ধাতব পদার্থ যেমন লেড, পারদ, আর্সেনিক ইত্যাদি বাতাসে মিশে মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসে ক্ষতি করে। কিন্তু সবুজ আতসবাজিতে ব্যবহৃত Zeolite এবং Iron Oxide জাতীয় পদার্থ রাসায়নিক বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে দূষণ কমায়।
যদিও সবুজ আতসবাজিও সম্পূর্ণভাবে দূষণমুক্ত নয়, তবুও এটি প্রচলিত আতসবাজির তুলনায় অনেক বেশি নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব।
সবুজ আতসবাজির তিনটি ধরন:
SWAS (Safe Water and Air Releaser): এটি ক্ষুদ্র জলকণা নির্গত করে যা বাতাসে ধুলোকণার পরিমাণ কমায়।
SAFAL (Safe Minimal Aluminium): এতে সীমিত পরিমাণ অ্যালুমিনিয়াম থাকে, ফলে শব্দ কম হয়।
STAR (Safe Thermite Cracker): এতে Sulphur ও Potassium Nitrate ব্যবহার হয় না, তাই ধোঁয়া তুলনামূলক কম।
আদালত বলেছে, “আমরা উৎসবের আনন্দে বিরক্তি আনতে চাই না, কিন্তু পরিবেশের সুরক্ষা নিয়েও আপস করা যাবে না।” এই নির্দেশের মাধ্যমে আদালত একদিকে যেমন পরিবেশ সুরক্ষায় বার্তা দিয়েছে, তেমনি দীপাবলির ঐতিহ্যও রক্ষা করেছে। আদালত আরও বলেছে, স্থানীয় প্রশাসনকে নজরদারি বাড়াতে হবে যাতে অবৈধ আতসবাজি বাজারে না আসে।
দূষণে হাঁসফাঁস করা দিল্লি এবার দীপাবলিতে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারে, কারণ সবুজ আতসবাজি দূষণ প্রায় ৩০% কমায়। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু আদালতের নির্দেশ নয়, নাগরিক সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা ছাড়া দূষণ রোধ সম্ভব নয়। উৎসবের আনন্দ যেন প্রকৃতির ক্ষতির বিনিময়ে না হয়—এই বার্তাই দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের এই সিদ্ধান্ত।