ডাইনি সন্দেহে ৭০ বছরের মাকে খুন ছেলের

ঝাড়খণ্ড: অন্ধবিশ্বাসের বলি এক বৃদ্ধা মা! ঝাড়খণ্ডের দমকা জেলার ভদ্রা দিঘা গ্রামে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা (Jharkhand superstition crime)। নিজের ৭০ বছরের মা’কে ডাইনি সন্দেহে খুন করেছে এক ব্যক্তি। ঘটনার সূত্রপাত অক্টোবরের ২৮ তারিখ রাতে, যখন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর মা মুনি সরেনের উপর একাধিকবার হামলা চালায়।

Advertisements

গুরুতর আহত অবস্থায় মুনি সরেনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও, কয়েকদিন চিকিৎসার পর শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং রবিবার মাধুবন এলাকা থেকে ৪১ বছর বয়সী অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে।

   

গোপীকান্দর থানার অফিসার ইনচার্জ সুমিত ভগত জানিয়েছেন, ‘‘অভিযুক্ত নিজের মেয়ের মৃত্যুর জন্য মাকে দায়ী করেছিল। সে বিশ্বাস করত, তাঁর মা নাকি ডাইনি বিদ্যা চর্চা করেন এবং তার ফলেই মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।’’

ভগত আরও বলেন, ‘‘অভিযুক্ত পূর্বেও মাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এদিন রাতে মদ্যপ অবস্থায় ক্রোধে অন্ধ হয়ে সে নিজের বোনের বাড়িতে গিয়ে মাকে ছুরিকাঘাত করে।’’ পুলিশ অভিযুক্তের কাছ থেকে হত্যার অস্ত্র, অর্থাৎ ছুরিটি উদ্ধার করেছে।

এই ঘটনার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় মানুষজন জানিয়েছেন, দমকা ও সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলে এখনও ডাইনি প্রথা ও কুসংস্কার প্রবলভাবে বিদ্যমান। কোনও অসুখ-বিসুখ বা দুর্ঘটনা ঘটলেই গ্রামীণ সমাজে কেউ না কেউ ‘ডাইনি’ হিসেবে চিহ্নিত হন।

Advertisements

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার মেয়ে অর্থাৎ অভিযুক্তের বোন শনিবার মায়ের মৃত্যুর পর থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে এবং আদালতের নির্দেশে তাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

এই ঘটনার পর প্রশাসন নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে জনসচেতনতা বৃদ্ধির। গোপীকান্দর থানার ওসি সুমিত ভগত বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ (DALSA)-এর সঙ্গে যৌথভাবে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করব। এই শিবিরগুলিতে গ্রামের মানুষদের জানানো হবে যে ঝাড়খণ্ড উইচক্র্যাফ্ট প্রিভেনশন অ্যাক্ট, ২০০১ অনুযায়ী ডাইনি অভিযোগে কাউকে আঘাত করা বা হত্যা করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।’’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘বনাঞ্চল ঘেরা এবং অশিক্ষার হার বেশি এমন গ্রামগুলিতেই এই ধরনের ঘটনা ঘটে বেশি। তাই আমাদের লক্ষ্য হবে—মানুষকে শিক্ষিত ও সচেতন করা, যাতে কুসংস্কার নয়, বিজ্ঞান ও মানবিকতা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়।’’

সামাজিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও প্রশাসনের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তারা বলছে, এই ঘটনার পরই বোঝা যাচ্ছে, অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই এখন সময়ের দাবি।