কলকাতা: অসম-অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি নদীর তীরে, গেরুকামুখে দাঁড়িয়ে আছে ভারতের সবচেয়ে বড় হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্প ২,০০০ মেগাওয়াটের সুবনসিরি লোয়ার হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট।
এই মহাকাশ্য প্রকল্পটি দীর্ঘ ২০ বছরের সংগ্রামের পর অবশেষে তার চূড়ান্ত পরীক্ষামূলক ধাপে পা দিয়েছে। ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ এই তারিখে এনএইচপিসি লিমিটেড (NHPC) প্রথম ২৫০ মেগাওয়াটের ইউনিটে ‘ওয়েট কমিশনিং’ শুরু করেছে।
শহরে নো-এন্ট্রি, রবিবার থেকেই চন্দননগরে যান নিয়ন্ত্রণ শুরু
এটি জল চালিয়ে টারবাইনের চূড়ান্ত টেস্ট রান, যা বিদ্যুৎ উৎপাদনের দরজা খুলে দিচ্ছে। এই মাইলফলকটি শুধু একটি প্রকৌশলী সাফল্য নয়, বরং ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তির পথে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত।সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটি ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় অনুমোদন পায় এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে নির্মাণ শুরু হয়।
এটি একটি ‘রান-অফ-দ্য-রিভার’ প্রকল্প, যার অর্থ নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহের উপর নির্ভর করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে, কোনো বড় রিজার্ভোয়ার ছাড়াই। প্রকল্পটিতে মোট আটটি ইউনিট রয়েছে, প্রত্যেকটি ২৫০ মেগাওয়াটের। সম্পূর্ণ চালু হলে এটি ভারতের সবচেয়ে বড় কনভেনশনাল পাওয়ার প্ল্যান্ট হয়ে উঠবে, যা বছরে ৭.৪ বিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
এর থেকে অসমকে ৫৩৩ মেগাওয়াট, অরুণাচলকে ২৭৪ মেগাওয়াট এবং বাকি ১৭টি রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। বার্ষিক আয় হবে প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকা, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। কিন্তু এই সাফল্যের পথ ছিল কাঁটাতারের মতো কঠিন। প্রকল্পের যাত্রা শুরু থেকেই বিতর্কের ঘেরাটোপে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে স্থানীয় বিরোধী দলগুলোর আন্দোলনের কারণে নির্মাণ সম্পূর্ণ থেমে যায়।
পরিবেশগত ও সামাজিক উদ্বেগ ছিল মূল কারণ নদীর জলপ্রবাহ ব্যাহত হলে নিম্নধারার অসমের জনজীবন বিপন্ন হতে পারে বলে অভিযোগ। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বাঁধ নির্মাণের ঝুঁকি, বন্যার আশঙ্কা এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস্তুঘর ডুবে যাওয়ার ভয়। ফলে ১৩ বছরের বিলম্ব ঘটে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের অনুমতি নেওয়ার পর কাজ পুনরায় শুরু হয়।
এরপরও ল্যান্ডস্লাইড, বন্যা এবং ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে বারবার বাধা। ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি পাহাড়ের ধস নামে, যা টানেল আটকে দেয় এবং নির্মাণে আরও বিলম্ব ঘটায়। এত সব বাধা অতিক্রম করে এখন প্রকল্পটি তার লক্ষ্যের কাছে পৌঁছেছে। এনএইচপিসির মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে সব ইউনিট চালু হবে।
ওয়েট কমিশনিং-এর অনুষ্ঠানে এনএইচপিসির চেয়ারম্যান অ্যান্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর ভূপেন্দর গুপ্ত উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, “এটি শুধু একটি মাইলফলক নয়, ভারতের সবুজ শক্তির দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রমাণ।” অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন সঞ্জয় কুমার সিং (প্রজেক্ট ডিরেক্টর), সুপ্রকাশ অধিকারী (টেকনিক্যাল ডিরেক্টর) প্রমুখ।
প্রকল্পের নির্মাণে BGS-SGS-SOMA, TREL, প্যাটেল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং GE Vernova-এর মতো কোম্পানিগুলোর অবদান অসামান্য। মোট ২২,০০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এর জন্য। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তির ফল, যা প্রকৌশলীদের দক্ষতার পরিচয় দেয়।

