আগামী মাসেই বাইকচালকদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কড়া আইন

CM Orders

উত্তরপ্রদেশ সরকার (CM Orders) সড়ক নিরাপত্তা বাড়াতে আগামী ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যব্যাপী ‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ অভিযান চালু করতে চলেছে। এই অভিযানের অধীনে, হেলমেট ছাড়া দুই চাকার যানবাহন চালকদের পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে শুরু হতে চলা এই অভিযান সড়ক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহানি কমানোর লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে।

Advertisements

উত্তরপ্রদেশ পরিবহন কমিশনার ব্রজেশ নারায়ণ সিং জানিয়েছেন, এই অভিযান শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, বরং নাগরিকদের নিরাপদ আচরণ গ্রহণে উৎসাহিত করার জন্য। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের তত্ত্বাবধানে এবং জেলা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির (ডিআরএসসি) সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালিত হবে।

পুলিশ, রাজস্ব বিভাগ, জেলা প্রশাসন এবং পরিবহন বিভাগ এই অভিযানের প্রয়োগে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। সরকার জনগণের কাছে এই প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছে।

এই অভিযান সম্পূর্ণভাবে আইনসম্মত এবং জনহিতকর। মোটর যানবাহন আইন, ১৯৮৮-এর ১২৯ ধারায় দুই চাকার যানবাহনের চালক এবং পেছনে বসা যাত্রীদের জন্য হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ১৯৪ডি ধারায় এই নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার বিধান রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সড়ক নিরাপত্তা কমিটিও রাজ্যগুলিকে হেলমেট ব্যবহারের উপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

পরিবহন কমিশনার সিং জানিয়েছেন, “‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ কোনো শাস্তি নয়, এটি নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি। হেলমেট পরা জীবনের সবচেয়ে সহজ বীমা।” তিনি জনগণ, পেট্রোল পাম্প সঞ্চালক এবং তেল কোম্পানিগুলির কাছে এই অভিযানে পূর্ণ সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই অভিযানে তেল বিপণন কোম্পানি—ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল)—এবং সমস্ত পেট্রোল পাম্প সঞ্চালকদের সক্রিয় সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

খাদ্য ও রসদ বিভাগ পেট্রোল পাম্প স্তরে সমন্বয় ও নজরদারি নিশ্চিত করবে। এছাড়া, তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগ জনসচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে সহায়তা করবে। অভিযানের লক্ষ্য হলো নাগরিক, শিল্প এবং প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও গুরুতর আঘাতের সংখ্যা কমানো।

পরিবহন কমিশনার জানিয়েছেন, অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, এই ধরনের অভিযানের ফলে দুই চাকার যানবাহন চালকরা দ্রুত হেলমেট পরার অভ্যাস গড়ে তোলেন। এটি জ্বালানি বিক্রির উপরও কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। ২০২৪ সালে, ভারতে প্রায় ১.৮ লক্ষ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন, যার মধ্যে ৩০,০০০ জনের মৃত্যু হেলমেট না পরার কারণে হয়েছিল।

Advertisements

প্রতিদিন গড়ে ৮০ জন মানুষ হেলমেট না পরার কারণে প্রাণ হারান। এই অভিযানের মাধ্যমে হেলমেট পরাকে আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে জীবন রক্ষাকারী অভ্যাসে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

অন্যান্য উদ্যোগএই অভিযান ছাড়াও, উত্তরপ্রদেশ সরকার ‘নো হেলমেট, নো এন্ট্রি’ নীতি প্রসারিত করেছে, যার অধীনে স্কুল, কলেজ, কারখানা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানে হেলমেট ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা শিল্প সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করছেন, যাতে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যায়।

গাজিয়াবাদ বিভাগে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা হেলমেট ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব পাস করে এবং সামাজিক চাপ সৃষ্টি করে। নয়ডা ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনও শিল্প ইউনিটগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে, হেলমেট ছাড়া কর্মীদের প্রবেশ না দেওয়ার জন্য।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এই অভিযানকে “হেলমেট প্রথমে, জ্বালানি পরে” হিসেবে বর্ণনা করে জনগণের কাছে এটিকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি হিসেবে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে, কিছু পেট্রোল পাম্প সঞ্চালক এই নীতি প্রয়োগে গ্রাহকদের ক্ষোভের আশঙ্কা করছেন এবং পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন।

উনি যদি ইংরেজিতে বক্তৃতা দেন, তাহলে…: কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

সামাজিক মাধ্যমে এই অভিযান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে সড়ক নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে সমর্থন করছেন, আবার কেউ কেউ এটিকে ব্যবহারিক সমস্যার কারণ হিসেবে দেখছেন।