Stalin Welcomes Supreme Court’s Historic Verdict
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন (stalin) মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের একটি ‘ঐতিহাসিক রায়’-কে স্বাগত জানিয়েছেন। আদালত রাজ্যপাল আর এন রবির ১০টি বিলে সম্মতি আটকে রাখার সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ এবং ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে রায় দিয়েছে।
এই বিলগুলোর মধ্যে দুটি পাস হয়েছিল আগের এআইএডিএমকে সরকারের আমলে। দুপুরে রাজ্য বিধানসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় স্ট্যালিন (stalin) বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পাস করা সমস্ত বিলে সম্মতি দিয়েছে, যেগুলো গভর্নর প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এটি শুধু তামিলনাড়ুর জন্য নয়, ভারতের সমস্ত রাজ্যের জন্য একটি বড় জয়।”
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ আরও সহজ, বাড়িতে বসেই KYC, জানুন বিস্তারিত
রায়ের গুরুত্ব
এই রায়ের মাধ্যমে ডিএমকে নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ু সরকার এবং গভর্নর আর এন রবির মধ্যে দীর্ঘদিনের সংঘাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসেছে। স্ট্যালিনের দল গভর্নরের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে, যিনি কেন্দ্রের বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক নিযুক্ত। ডিএমকে দাবি করেছে, “গভর্নরের পদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রবির পদত্যাগ করা উচিত।” এই দাবি দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার গভীরতা প্রকাশ করে।
মঙ্গলবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ রায় দেন যে, এই বিলগুলো “যে তারিখে গভর্নরের কাছে পুনরায় উপস্থাপিত হয়েছিল, সেই তারিখ থেকে অনুমোদিত বলে গণ্য হবে।” আদালত বলেছে, গভর্নর রবি ‘সৎ বিশ্বাসে’ কাজ করেননি। এই বিলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ এবং রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব।
দীর্ঘদিনের সংঘাত (stalin)
গত কয়েক বছর ধরে ডিএমকে (stalin) অভিযোগ করে আসছে যে, গভর্নর রবি ইচ্ছাকৃতভাবে বিলগুলো আটকে রেখে রাজ্যের উন্নয়ন প্রকল্পে বাধা সৃষ্টি করছেন। তাঁরা বলছেন, এটি ‘নির্বাচিত সরকারকে দুর্বল করার’ প্রয়াস এবং ‘জনগণের ইচ্ছার অবমাননা’। এই বিরোধ বারবার শিরোনামে এসেছে এবং সুপ্রিম কোর্টে উঠেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে আদালত রবিকে কঠিন প্রশ্ন করেছিল, “এই বিলগুলো ২০২০ সাল থেকে পড়ে আছে। তিনি তিন বছর ধরে কী করছিলেন?”
এ বছরের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট ক্ষুব্ধ হয়ে উভয় পক্ষকে সতর্ক করে বলেছিল, “এই বিরোধ সমাধান করুন, নইলে আমরা ব্যবস্থা নেব।” এই রায়ে তামিলনাড়ু সরকারের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে, যারা অন্যান্য অ-বিজেপি শাসিত রাজ্য যেমন কেরল এবং পাঞ্জাবের মতো একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন।
রায়ের বিশদ
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ স্পষ্ট করেছে যে, গভর্নরের কাছে বিল পুনরায় উপস্থাপনের পর তিনি সম্মতি দিতে বাধ্য। আদালত নির্দেশ দিয়েছে, গভর্নরকে এক মাসের মধ্যে বিলে সম্মতি দিতে হবে অথবা তিন মাসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে হবে, যদি তিনি সম্মতি আটকে রাখেন। এই সময়সীমা লঙ্ঘন হলে গভর্নরের পদক্ষেপ বিচারিক পর্যালোচনার আওতায় আসবে। বিচারপতি পারদিওয়ালা বলেন, “গভর্নরের সমস্ত কাজ সংসদীয় গণতন্ত্রের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।”
রাজনৈতিক প্রভাব
এই রায় তামিলনাড়ুতে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের উত্তেজনার মধ্যে এসেছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া’ বিতর্ক এবং এনইইটি (ন্যাশনাল এন্ট্রান্স টেস্ট) থেকে তামিলনাড়ুকে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মতো বিষয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এই রায় ডিএমকে-র জন্য একটি বড় উৎসাহ, যারা কংগ্রেসের মতো মিত্রদের নিয়ে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এআইএডিএমকে এবং বিজেপিও এই নির্বাচনের জন্য কোমর বেঁধেছে। ডিএমকে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, গভর্নর রবি বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন, রাজ্যের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে। তারা বলছে, এই রায় রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন এবং ফেডারেল ব্যবস্থার জয়। স্ট্যালিন বলেন, “তামিলনাড়ু লড়বে, তামিলনাড়ু জিতবে।”
গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
এই রায় গভর্নরের ভূমিকা নিয়ে বৃহত্তর প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের সংবিধানের ২০০ অনুচ্ছেদে গভর্নরের কাছে তিনটি বিকল্প রয়েছে—বিলে সম্মতি দেওয়া, সম্মতি আটকে রাখা, অথবা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট করেছে যে, গভর্নর কোনও বিলে ‘পকেট ভেটো’ বা স্থায়ীভাবে আটকে রাখার ক্ষমতা রাখেন না। আদালত বলেছে, “গভর্নরের কাজ মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শে হতে হবে।”
এই রায় অন্যান্য অ-বিজেপি রাজ্যেও নজির স্থাপন করতে পারে
এই রায় অন্যান্য অ-বিজেপি রাজ্য যেমন কেরল, পাঞ্জাব এবং তেলঙ্গানার জন্যও একটি নজির স্থাপন করতে পারে, যেখানে গভর্নরদের সঙ্গে একই ধরনের বিরোধ চলছে। তামিলনাড়ুর জন্য এটি শুধু আইনি জয় নয়, রাজনৈতিক শক্তিও বাড়িয়েছে। এনইইটি ছাড়ের বিল এখনও রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায় রয়েছে, এবং এই রায়ের আলোকে সেই বিষয়েও আইনি পদক্ষেপের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
গভর্নর রবির পক্ষ থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, এই রায়ের পর তাঁর অবস্থান আরও দুর্বল হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামী দিনে এই বিরোধ কীভাবে কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে, তা দেখার বিষয়।