বিজয় কে উচ্চাভিলাষী বলে কটাক্ষ স্ট্যালিনের মন্ত্রীর

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তামিল সিনেমার সুপারস্টার ও তামিলাগা বেত্ত্রি কঝাগম (Thalapathy Vijay)-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয়, যিনি ‘থালাপথি’ নামে জনপ্রিয়, এবং ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্র…

Thalapathy Vijay

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। তামিল সিনেমার সুপারস্টার ও তামিলাগা বেত্ত্রি কঝাগম (Thalapathy Vijay)-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজয়, যিনি ‘থালাপথি’ নামে জনপ্রিয়, এবং ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্র কঝাগম (ডিএমকে) সরকারের মধ্যে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছে।

সম্প্রতি, ডিএমকে’র একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী বিজয়ের রাজনৈতিক উত্থানকে উড়িয়ে দিয়ে তাঁকে ‘নীতিহীন’ এবং ‘অপরিপক্ক’ বলে সমালোচনা করেছেন। এই মন্ত্রী, যিনি ডিএমকে’র নেতৃত্বাধীন তামিলনাড়ু সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, বিজয়ের দল টিভিকে’র ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিকে ‘অনভিজ্ঞ’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয় উচ্চাভিলাষী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এই মন্তব্য তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।

   

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে টিভিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিজয় তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি ডিএমকে’র বিরুদ্ধে দুর্নীতি, পারিবারিক রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তীব্র সমালোচনা করেছেন।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে টিভিকে’র প্রথম সাধারণ সভায় বিজয় ঘোষণা করেন যে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন হবে টিভিকে এবং ডিএমকে’র মধ্যে সরাসরি লড়াই।

তিনি মুখ্যমন্ত্রী এম.কে. স্ট্যালিনকে সরাসরি নিশানা করে বলেন, “শুধু নামে সাহস থাকলেই হবে না, কাজেও তা দেখাতে হবে।” তিনি ডিএমকে সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যা দিয়ে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নারী নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেন।

এই আক্রমণের জবাবে ডিএমকে’র মন্ত্রী টি.কে.এস. এলাঙ্গোভান বিজয়ের রাজনৈতিক অভিযানকে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “বিজয় কোনও নীতি ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর দলের কোনও স্পষ্ট ভাষা বা সামাজিক নীতি নেই।” এলাঙ্গোভান আরও দাবি করেন যে টিভিকে’র নীতিগুলি ডিএমকে’র দ্রাবিড় আদর্শের ‘অনুকরণ’ মাত্র।

তিনি বলেন, “ডিএমকে জনগণের জন্য কারাগারে গিয়েছে, লড়াই করেছে। বিজয়ের দলের নেতারা কি এমন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত?” এই মন্তব্যের মাধ্যমে ডিএমকে বিজয়ের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং প্রতিশ্রুতির গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিজয় এবং ডিএমকে’র মধ্যে সংঘাত তীব্র হয়েছে হিন্দি আরোপ বিতর্কের মাধ্যমে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিজয় কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার এবং ডিএমকে’র মধ্যে হিন্দি নীতি নিয়ে বিতর্ককে ‘কেজি স্কুলের ছাত্রদের ঝগড়া’ বলে কটাক্ষ করেন। তিনি তিন ভাষার নীতির বিরোধিতা করে বলেন, “তামিলনাড়ুতে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।”

Advertisements

তিনি ডিএমকে’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে তারা বিজেপির সঙ্গে ‘গোপন জোট’ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। ডিএমকে এই অভিযোগের জবাবে বিজয়কে ‘বিজেপির বি-টিম’ বলে কটাক্ষ করে এবং তাঁর দ্রাবিড় আদর্শের সমর্থনকে ‘মায়া’ বলে উড়িয়ে দেয়।

বিজয় তাঁর দলকে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন, ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে’র বিকল্প হিসেবে। তিনি মাদুরাই পূর্ব থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা করেছেন এবং জোট গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “২০২৬ সালের নির্বাচন টিভিকে বনাম ডিএমকে’র লড়াই হবে।”

তিনি দ্রাবিড় আইকন পেরিয়ার, কামারাজ, আম্বেদকর এবং রানি ভেলু নাচিয়ারের আদর্শকে গ্রহণ করার কথা বলেছেন, তবে পেরিয়ারের নাস্তিকতার বিরোধিতা করে ধর্মীয় সহনশীলতার উপর জোর দিয়েছেন।

অন্যদিকে, ডিএমকে’র ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্ট্যালিন বিজয়ের সমালোচনার জবাবে বলেন, “২০২৬ সালে যে কোনও বিরোধী জোটই হোক, ডিএমকে জয়ী হবে।” তিনি দাবি করেন যে তাঁদের দ্রাবিড় মডেল সরকার নীতি আয়োগের রিপোর্টে উচ্চ প্রশংসা পেয়েছে।

বিজয়ের রাজনৈতিক উত্থান তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে নতুন গতিশীলতা তৈরি করেছে। তাঁর বিশাল ফ্যান ফলোয়িং এবং যুব সমর্থন তাঁকে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে। তবে, ডিএমকে এবং এআইএডিএমকে’র মতো প্রতিষ্ঠিত দ্রাবিড় দলগুলির সম্মিলিত ভোট শেয়ার ৬০-৬৫%। একটি জরিপে বলা হয়েছে, টিভিকে ৩৪.৫৫% ভোট শেয়ার নিয়ে ৯৫-১০৫টি আসন জিততে পারে, তবে সরকার গঠনের জন্য জোটের প্রয়োজন হবে।

থালাপথি বিজয় এবং ডিএমকে’র মধ্যে এই তীব্র সংঘাত তামিলনাড়ুর রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ডিএমকে’র মন্ত্রীর বিজয়কে ‘নীতিহীন’ বলে সমালোচনা এবং বিজয়ের পাল্টা আক্রমণ ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক লড়াইকে আরও জটিল করেছে।

বিজয়ের টিভিকে কি দ্রাবিড় রাজনীতির গতানুগতিক ধারাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবে, নাকি ডিএমকে’র শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তাদের আধিপত্য বজায় রাখবে, তা সময়ই বলবে।