তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন (stalin) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আসন্ন সীমানা পুনর্নির্ধারণ (ডিলিমিটেশন) প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যের জনগণের মনে থাকা ভয় দূর করার জন্য একটি প্রতিশ্রুতি দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, তামিলনাড়ু এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল অন্যান্য রাজ্যগুলির সংসদীয় আসনের শতাংশ অপরিবর্তিত থাকবে। এই বক্তব্য এসেছে তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমে নতুন পাম্বান সেতুর উদ্বোধনের দিনে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদী উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু স্ট্যালিন অনুপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদী রামেশ্বরমে পাম্বান সেতুর উদ্বোধন
প্রধানমন্ত্রী মোদী রামেশ্বরমে পাম্বান সেতুর উদ্বোধন করেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে দেখা গেছে। এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে স্ট্যালিনের (stalin) অনুপস্থিতি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, “তামিল মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে একটি স্পষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে হবে: তামিলনাড়ু এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল অন্যান্য রাজ্যগুলি আসন্ন সীমানা পুনর্নির্ধারণে শাস্তি পাবে না। তাদের সংসদীয় আসনের শতাংশ অক্ষুণ্ণ থাকবে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই প্রতিশ্রুতি প্রকাশ্যে দিতে হবে,
তামিলনাড়ুর জনগণের মনের ভয় দূর করতে হবে এবং সংসদে একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে। এটিই ন্যায্য সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিশ্চিত করার একমাত্র উপায়। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।” তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলি দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে যে, সীমানা পুনর্নির্ধারণ ১৯৭১ সালের জনসংখ্যা তথ্যের ভিত্তিতে করা উচিত।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন
তারা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ২০০১ সালের প্রতিশ্রুতি মেনে চলা হোক। স্ট্যালিন উল্লেখ করেন, বাজপেয়ীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোদীকে সংসদে একটি বিবৃতি দিয়ে ২০২৬ সালের পর আরও ৩০ বছরের জন্য এই ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি ২০২৬ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়, তাহলে তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্যগুলি সংসদে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব হারাবে।
চিনের তৈরি ‘ক্যারিয়ার কিলার’ মিসাইল, ড্রাগনের KD-21 হতে পারে এয়ারফোর্সের কাল
স্ট্যালিনের (stalin) এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ
স্ট্যালিনের এই বক্তব্য রাজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে। তিনি বলেন, “তামিলনাড়ু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। আমরা সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করেছি। কিন্তু এখন এই সাফল্যের জন্য আমাদের শাস্তি দেওয়া হবে, যদি সীমানা পুনর্নির্ধারণে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন কমানো হয়।” তিনি আরও বলেন, “উত্তর ভারতের রাজ্যগুলি, যেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তারা বেশি আসন পাবে। এটি দক্ষিণের রাজ্যগুলির কণ্ঠস্বরকে দুর্বল করবে।”
রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন
পাম্বান সেতুর উদ্বোধনের দিনে স্ট্যালিনের অনুপস্থিতি এবং তাঁর এই জোরালো বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। এই সেতু তামিলনাড়ুর অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় পদক্ষেপ হলেও, স্ট্যালিনের মনোযোগ ছিল সীমানা পুনর্নির্ধারণের মতো বৃহত্তর রাজনৈতিক ইস্যুর দিকে। তিনি বলেন, “আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। কিন্তু আমাদের সংসদে প্রতিনিধিত্বের অধিকারও রক্ষা করতে হবে।”
তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দলগুলি বারবার বলে আসছে যে, ১৯৭১ সালের জনসংখ্যা তথ্যের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলির স্বার্থ রক্ষা পাবে। ২০০১ সালে বাজপেয়ী সরকার এই নীতি গ্রহণ করেছিল, যাতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সফল রাজ্যগুলি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। স্ট্যালিন বলেন, “এই প্রতিশ্রুতি মেনে চলা উচিত। ২০২৬ সালের পরও এই ব্যবস্থা ৩০ বছরের জন্য বাড়ানো দরকার।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্ট্যালিনের (stalin) এই দাবি কেবল তামিলনাড়ুর জন্য নয়, বরং সমগ্র দক্ষিণ ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “যদি ২০২৬ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হয়, তাহলে তামিলনাড়ু আটটি আসন হারাতে পারে। এটি আমাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে কমিয়ে দেবে।” তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু আসনের সংখ্যার প্রশ্ন নয়, এটি আমাদের অধিকারের প্রশ্ন।”
স্ট্যালিনের এই বক্তব্যের পর তামিলনাড়ুতে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জোরালো হয়েছে। তিনি বলেন, “আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। এটি কোনও দলের ইস্যু নয়, এটি তামিলনাড়ুর ভবিষ্যতের প্রশ্ন।” তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সংসদে একটি প্রস্তাব পাশ করার আহ্বান জানান, যাতে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
বিজেপি নেতারা স্ট্যালিনের এই দাবিকে “ভয় দেখানোর কৌশল” বলে সমালোচনা করেছে
এদিকে, বিজেপি নেতারা স্ট্যালিনের এই দাবিকে “ভয় দেখানোর কৌশল” বলে সমালোচনা করেছেন। তবে, স্ট্যালিন বলেন, “আমরা ভয় দেখাচ্ছি না, আমরা আমাদের অধিকারের জন্য লড়ছি।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্র ও ফেডারেলিজমের চেতনায় এই দাবি মেনে নেবেন। এই ঘটনা আগামী দিনে কেন্দ্র ও তামিলনাড়ুর মধ্যে সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। স্ট্যালিনের অনুপস্থিতি এবং তাঁর জোরালো বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তিনি এই ইস্যুতে পিছু হটবেন না।