কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে মমতাকে সমর্থন করলেন সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই

কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রকাশ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় কে সমর্থন করলেন সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই (Amik-Jamei)। কসবা ল কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও…

amik-jamei supports mamata on gangrape case

কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে প্রকাশ্যে মমতা বন্দোপাধ্যায় কে সমর্থন করলেন সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই (Amik-Jamei)। কসবা ল কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মহিলা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার নীতি রয়েছে।

তিনি (Amik-Jamei) আরও বলেন শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় আজ সারা দেশে মহিলাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি দিল্লির উদাহরণ দিয়ে বলেন সেখানে কি ধর্ষণ হচ্ছেনা। শুধু মাত্র যেখানে নির্বাচন আসন্ন ঠিক সেই রাজ্য গুলিকে হাইলাইট করা হচ্ছে মানুষের সামনে। রাজ্যে এটি নিশ্চিত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।”

   

এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে এবং কলকাতা পুলিশ তদন্তে তৎপর হয়েছে। তবে, বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে।

ঘটনার পটভূমি (Amik-Jamei)

২৫ জুন, ২০২৫-এ কলকাতার কসবা এলাকায় অবস্থিত সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক ২৪ বছর বয়সী প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে কলেজ প্রাঙ্গণে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়। পুলিশ তিনজন অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র , জায়েব আহমেদ এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদের মধ্যে মনোজিৎ মিশ্র তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা এবং দক্ষিণ কলকাতার সাংগঠনিক সম্পাদক বলে জানা গেছে। এই ঘটনার পর জাতীয় মহিলা কমিশন (এনসিডব্লিউ) কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে তদন্তের জন্য জরুরি ও সময়বদ্ধ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

এই ঘটনা গত বছরের আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে একজন ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরে পশ্চিমবঙ্গে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষ এবং শুভেন্দু অধিকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করে বলেছেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে এবং মহিলারা নিরাপদ নন।

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তৃণমূল নেতা কুনাল ঘোষ বলেন, (Amik-Jamei)“এটি একটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রত্যেক তৃণমূল কর্মী এই ঘটনার নিন্দা করছে। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা কোনো নির্যাতনের সমর্থন করি না এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”

তৃণমূল আরও দাবি করেছে যে, মনোজিৎ মিশ্রের (Amik-Jamei) সঙ্গে দলের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই এবং বিজেপি এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তৃণমূলের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ বলেন, “মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ মোটেই সহ্য করা হবে না।

Advertisements

অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।” তৃণমূল এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘অপরাজিতা অ্যান্টি-রেপ বিল’-এর বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে, যা গত বছর আরজি কর মামলার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবর্তন করেছিলেন।

সমাজবাদী পার্টির সমর্থন

সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Amik-Jamei) প্রশংসা করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শূন্য সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, তৃণমূল সরকার এই মামলায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা সরকারের দায়বদ্ধতার প্রমাণ। এই মন্তব্য তৃণমূলের পক্ষে রাজনৈতিক সমর্থন জোগাড় করতে সাহায্য করলেও, বিরোধী দলগুলো এটিকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদ হিসেবে সমালোচনা করেছে।

কলিঙ্গে টিডিএস অ্যাকাডেমি গঠনের লক্ষ্যে চৌবে র পাশে ওয়েঙ্গার

সমাজে প্রভাব

কলকাতার এই গণধর্ষণের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার পর কলকাতায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এসএফআই এবং এআইডিএসও-এর মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো কসবা থানা এবং ল কলেজের সামনে প্রতিবাদ করেছে। জাতীয় মহিলা কমিশনের হস্তক্ষেপ এবং চারজনের গ্রেপ্তার (তিন অভিযুক্ত ও এক নিরাপত্তারক্ষী) এই মামলায় তদন্তের গুরুত্ব বাড়িয়েছে।

বিজেপি নেতা অগ্নিমিত্রা পাল বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ করা উচিত। রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।” তিনি কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলারও সমালোচনা করেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।”

আইনি পদক্ষেপ এবং অপরাজিতা বিল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Amik-Jamei) গত বছর আরজি কর মামলার পর ‘অপরাজিতা উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড বিল’ প্রবর্তন করেছিলেন, যা ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের মামলায় কঠোর শাস্তি এবং দ্রুত বিচারের জন্য বিশেষ আদালত গঠনের বিধান রাখে। এই বিলে ধর্ষণের শাস্তি ১০ বছরের পরিবর্তে আজীবন কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হয়েছে। তবে, এই বিল এখনও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

কলকাতার গণধর্ষণ মামলায় তৃণমূল সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিলেও, বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা এবং জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র আমিক জামেইয়ের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা তৃণমূলের পক্ষে সমর্থন যোগালেও, বিজেপির তীব্র সমালোচনা এবং পদত্যাগের দাবি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই ঘটনা এবং তৃণমূলের ‘অপরাজিতা বিল’ মহিলা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে, তবে এর বাস্তবায়ন এবং ফলপ্রসূতা ভবিষ্যতের উপর নির্ভর করছে।