ইয়েচুরির পর কার হাতে সিপিআইএম? নজির গড়তে পারেন যিনি!

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভোটে আপোষ হলেও সাংগঠনিক নীতিতে কট্টরপন্থী ছিলেন প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechury)। লেনিন বিরোধী বলে চর্চিত ট্রটস্কির “আলাদা চলো কিন্তু একসাথে লড়াই করো”…

Sitaram Yechury

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: ভোটে আপোষ হলেও সাংগঠনিক নীতিতে কট্টরপন্থী ছিলেন প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি (Sitaram Yechury)। লেনিন বিরোধী বলে চর্চিত ট্রটস্কির “আলাদা চলো কিন্তু একসাথে লড়াই করো” (March separately but strike together) তত্ত্ব উত্থাপন করেছিলেন ২০১৭ সালে দলেরই সর্বভারতীয় সম্মেলনের ঠিক আগে! হই হই পড়ে গেছিল বাম মহলে। ততদিনে ভারতের দুর্ভেদ্য বাম ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গে সিপিআইএম কুঁকড়ে গেছে। তবে বিপুল শক্তি নিয়ে ত্রিপুরায় চলছিল দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে বাম জমানা।

ইয়েচুরির যুক্তি ছিল সমস্ত বিজেপি-বিরোধী ভোটগুলিকে একত্রিত করার। এর অর্থ কংগ্রেসের মতো দলগুলির সাথে একটি নির্বাচনী বোঝাপড়া। বলা বাহুল্য তাঁর এই ভোট কুশলী লাইন সিপিআইএমের আরও এক দুর্গ কেরলেন নেতারা মানতে চাননি। তেমনই ত্রিপুরার নেতৃত্বও তখনকার মতো মেনে নেননি।

   

২০১৮ সালে সিপিআইএমের সর্বভারতীয় সম্মেলনের বছরেই ত্রিপুরায় দুর্জয় বাম দুর্গের পতন হয়। দেশে সেই প্রথম সিপিআইএম তাদের মূল শত্রু সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক শক্তি বিজেপির কাছে পরাজিত হয়। দুই বঙ্গ ঘাঁটির ক্ষমতা থেকে বামপক্ষ সরে যাওয়ার পর ক্রমশ কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী নৈকট্য ও সর্বশেষ লোকসভা ভোটে দুটি রাজ্যে নির্বাচনী জোট হয়। বরাবরের মতো ইয়েচুরির তত্ত্ব বাতিল করে কেরল লবি একলাই লড়াই করেছে। তিনটি রাজ্যে তেমন কোনও রাজনৈতিক সফলতা আসেনি

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপি বিরোধী একজোট ইন্ডিয়া গঠন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ইয়েচুরি। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলের উপস্থিতি নিয়েই দলেরই অভ্যন্তর ও সমর্থক মহলে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়ে জেরবার হয়েছিলেন সীতারাম। সংঘ পরিবার যাঁকে দেবী দুর্গা বলে চিহ্নিত করেছে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ইয়েচুরির এক বৈঠকে থাকা অসহনীয় জ্বলুনি বলে বাম সমর্থকরা গরম হয়ে গেছিলেন। তবে বিজেপি বিরোধী মহাজোট গঠনে ইয়েচুরি ছিলেন তাঁর সেই ট্রটস্কি তত্ত্বে অনড়। নির্বাচনে বিজেপি ধাক্কা খায়। সিপিআইএমের রক্তক্ষরণ অব্যাহত থাকে। তাৎপর্যপূর্ণ, ইন্ডিয়া জোট ও তার শরিক জাতীয় কংগ্রেস হয় মূল বিরোধী পক্ষ।

সিপিআইএমের এমনই জোটপন্থী নেতা সীতারাম ইয়েচুরি সব দলের কাছেই সুপরিচিত। তাঁর চরম শত্রু রাম ভক্ত বিজেপি ও সংঘ পরিবারও সীতারামে মুগ্ধ বলেই রাজনৈতিক মহলে চর্চা হয়। প্রশ্ন উঠছে, এবার কে? সিপিআইএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে আনা হবে?

১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি তাত্বিক তর্কে দু’টুকরো হয়েছিল-সিপিআই ও সিপিআইএম। তারপর থেকে সিপিআইএম হয়েছে দেশের প্রধান বাম শক্তি। ১৯৬৮ সালে এই দলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ গণতান্ত্রিক নাকি সশস্ত্র এই দ্বন্দ্ব তীব্র হয়েছিল। সেই বছর সিপিআইএমের বিশেষ বর্ধিত সম্মেলন (দলটির ভাষ্যে প্লেনাম) অনুষ্ঠিত হয়েছিল বর্ধমান শহরে (এখন পূর্ব বর্ধমান জেলা সদর)। এই সম্মেলনেই সশস্ত্রপন্থীরা পৃথক হয়ে গেছিলেন। যার ফল নকশাল রাজনীতি ও আজকের মাওবাদীরা।

১৯৬৮ সাল থেকে সিপিআইএমের যে নবযাত্রা তাতে সর্বভারতীয় সম্পাদকের পদে দক্ষিণী মুখেরই সমাহার। এই দক্ষিণী মুখের সর্বদল প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। নিজ মাতৃভাষা তেলগু, বাংলা, হিন্দি, ইংরাজিসহ আরও কয়েকটি ভাষায় সাবলীল ছিলেন। দলের অস্তিত্ব সর্বত্র না থাকলেও দেশের সর্বত্র তাঁর পরিচিতি ছিল। দেশের বাইরেও তিনি চর্চিত ছিলেন। এমন আর কে আছেন সিপিআইএমের ভিতর? এক্ষেত্রে একটি নাম আলোচিত হচ্ছে-বৃন্দা কারাত!

সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতের আছে সর্বভারতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিচিত। বিভিন্ন দলের শীর্ষস্তরে বৃন্দার সংযোগ আছে। তিনি নারী রাজনীতিক হিসেবে সংবাদমাধ্যমের কাছে গ্রহনীয়। কর্মজীবনে শাড়ি পরা বিতর্কে লোভনীয় এয়ারহোস্টেস চাকরি ছেড়ে হোলটাইমার হয়েছিলেন। দীর্ঘ কয়েক দশক তাঁর দলের শীর্ষ সাংগঠনিক স্তরে আছেন।  সংসদ ঘুরে আসা নেত্রী। তাঁর স্বামী প্রকাশ কারাত তাদের দলের অভ্যন্তরে সীতারাম বিরোধী বলে গুঞ্জন ওঠে। তিনি সিপিআ্ইএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। সেক্ষেত্রে বাঙালি হলেও কারাত-জায়া বৃন্দার উপর দক্ষিণী লবির জোর থাকবে। দিল্লিতে বস্তি উচ্ছেদ রোখা ও বিভিন্ন সময় তাঁর নাম তীব্র চর্চিত। এই নামে শিলমোহর দিলে সিপিআইএম নজির গড়বে বলে তীব্র চর্চা। নারী হাতে যাবে সিপিআইএমের লাগাম?