দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) ইমপিচ করা প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সামরিক আইন চাপানোর ব্যর্থ প্রচেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি শেষে, শত শত দুর্নীতি অনুসন্ধানকারী এবং পুলিশ সদস্যরা তার প্রেসিডেন্সিয়াল কমপাউন্ডে অভিযান চালায়, যা একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) দুর্নীতি তদন্ত অফিস (CIO) জানায়, ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ১০:৩৩ AM-এ কার্যকর করা হয় এবং তিনি সিউলের কেন্দ্রস্থল থেকে গ্বাচেওনে সিআইও অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট ইউনের গ্রেপ্তারের এই ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনও বসবাসরত প্রেসিডেন্টের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর, ইউনকে সিআইও অফিসে নিয়ে আসা হয় এবং সেখানে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলতে থাকে। সিআইও অফিস পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার বিরুদ্ধে একটি আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আবেদন করবে বলে জানা গেছে।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়োলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৩ ডিসেম্বর রাত ১১টায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন বন্ধ করতে এবং সংসদ সদস্যদের ভোটিং ঠেকাতে তিনি সামরিক আইন জারি করেন। এসময় তিনি সেনাবাহিনীকে জাতীয় সংসদের কাছে পাঠান। তিনি তার এই পদক্ষেপটিকে একটি শাসন পরিচালনার পদক্ষেপ হিসেবে রক্ষা করেন, যা মূলত তিনি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে সতর্ক করার জন্য গ্রহণ করেছিলেন। ইউনের মতে, সংসদীয় ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল।
তবে এই পদক্ষেপটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী দল এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তকে এক ধরনের অগণতান্ত্রিক এবং স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা দাবি করছেন, ইউনের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলিকে লঙ্ঘন করেছেন। এমনকি, এই সামরিক আইন প্রয়োগের পেছনে ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
এই ঘটনার পর, ইউন সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রতিবাদ এবং সমালোচনা শুরু হয়। সাধারণ জনগণের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং অনেকেই তার এই পদক্ষেপকে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন। যদিও প্রেসিডেন্ট ইউন তার সিদ্ধান্তকে আইনসঙ্গত বলে দাবি করেছেন, তবুও রাজনৈতিক মহলে তার গ্রেপ্তারি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
এই পরিস্থিতি দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এক নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। বিশেষ করে, যখন একটি দেশের প্রেসিডেন্টই আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হন, তখন তার দেশব্যাপী প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। ইউন সুক ইয়োলের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে।