নয়াদিল্লি: ভারতের প্রখ্যাত পরিবেশবিদ ও শিক্ষাবিদ সোনম ওয়াংচুককে ঘিরে লাদাখে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক অস্থিরতা। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান যোগ, আর্থিক অনিয়ম ও সহিংসতা উসকানির অভিযোগ আনা হলেও, তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি আঙ্গমো সেই সমস্ত দাবি সরাসরি খারিজ করে দেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর লেহ-তে ষষ্ঠ তফসিল মর্যাদা ও রাজ্যত্বের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন চলাকালীন সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যু হয় এবং প্রায় ৯০ জন আহত হন। এর দু’দিন পরই জাতীয় নিরাপত্তা আইন (NSA)-এর আওতায় গ্রেফতার করা হয় ওয়াংচুককে। এরপর তাঁকে লাদাখ থেকে সরিয়ে জোধপুর জেলে পাঠানো হয়।
সবচেয়ে ‘গান্ধীয় পথে’ আন্দোলন
গীতাঞ্জলি আঙ্গমো, হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অব অল্টারনেটিভ লার্নিং (HIAL)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন,“ওয়াংচুক সর্বদাই সবচেয়ে ‘গান্ধীয় পথে’ আন্দোলন করেছেন। লেহর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মূলত সিআরপিএফ-এর পদক্ষেপে, আমার স্বামীর কারণে নয়।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, গ্রেফতারের পর থেকে ওয়াংচুকের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করতে পারেননি এবং প্রশাসন এখনও তাঁদের হাতে আটকাদেশের কপি তুলে দেয়নি।
পাকিস্তান যোগের অভিযোগ sonam wangchuk pakistan link wife denial
লাদাখ পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল এসডি সিং জামওয়াল দাবি করেছেন, গত মাসে পাকিস্তানি এক গোয়েন্দাকে গ্রেফতারের পর ওয়াংচুকের বিদেশযাত্রা ও পাকিস্তান সফরকে সন্দেহজনক বলে মনে করা হচ্ছে। এমনকি পাকিস্তানের ডন মিডিয়া আয়োজিত এক সম্মেলনে তাঁর উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
তবে গীতাঞ্জলি আঙ্গমোর বক্তব্য, “এগুলি সম্পূর্ণ জলবৎ তরলং অভিযোগ। ওঁর পাকিস্তান সফর ছিল রাষ্ট্রসংঘ আয়োজিত জলবায়ু সম্মেলনের অংশ। সেখানে তিনিই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করেছিলেন।” তিনি আরও যোগ করেন, হিমালয়ের হিমবাহ তো সীমান্ত চেনে না,“সেটি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা নেপাল—সব দেশকেই প্রভাবিত করে।”
আন্দোলন ও দমননীতি
ওয়াংচুকপন্থীদের অভিযোগ, লেহ এপেক্স বডি-র ডাকা আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সিআরপিএফ টিয়ার গ্যাস ছোড়ার পর যুবকরা প্রতিক্রিয়ায় ইট-পাথর ছোড়ে এবং পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। গীতাঞ্জলির প্রশ্ন—“আপনার নিজের যুবকদের উপর কেন গুলি চালানো হবে? কাকে সেই অনুমতি দেওয়া হয়েছিল?”
আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ
এছাড়াও ওয়াংচুক প্রতিষ্ঠিত সেকমল (SECMOL)-এর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সংস্থার এফসিআরএ লাইসেন্স বাতিল করেছে। গীতাঞ্জলি এ বিষয়ে বলেন, “আমাদের বিদেশি অর্থায়ন এসেছে পরামর্শমূলক প্রকল্প থেকে, দান থেকে নয়। হিয়ালের ৪০০ ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে আমরা কোনও ফি নিই না।”
তাঁর কথায়, “এই প্রতিষ্ঠান হিমালয়ের টেকসই উন্নয়নের জন্য বরফ স্তূপ (Ice Stupa), প্যাসিভ সোলার বিল্ডিং সহ নানা উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করেছে। প্রশাসনিক জটিলতা এবং ইচ্ছাকৃত বিলম্বকে এখন আর্থিক অনিয়ম হিসেবে দেখানো হচ্ছে।”
সোনম ওয়াংচুকের গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মীদের একাংশের মতে, ‘গান্ধীয় পথে’ আন্দোলনরত একজন পরিবেশ-শিক্ষাবিদকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা শুধু লাদাখ নয়, গোটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য এক গুরুতর সতর্কবার্তা।