HomeBharatভারতের প্রথম প্রাইভেট কমার্শিয়াল রকেট ‘বিক্রম-I’: ক্ষমতা কতটা, কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের প্রথম প্রাইভেট কমার্শিয়াল রকেট ‘বিক্রম-I’: ক্ষমতা কতটা, কেন তা গুরুত্বপূর্ণ?

- Advertisement -

ভারতের বেসরকারি মহাকাশ অভিযানে আরও এক ঐতিহাসিক অধ্যায় রচিত হল বৃহস্পতিবার। হায়দরাবাদে স্কাইরুট অ্যারোস্পেসের সর্বাধুনিক ‘ইনফিনিটি ক্যাম্পাস’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই সঙ্গে ভার্চুয়ালি উন্মোচন করলেন স্কাইরুটের প্রথম অরবিটাল লঞ্চ ভেহিকল ‘বিক্রম-I’—যা হবে ভারতের প্রথম বাণিজ্যিক বেসরকারি রকেট, পৃথিবীর কক্ষপথে একাধিক স্যাটেলাইট স্থাপন করতে সক্ষম।

২০২২ সালের নভেম্বরে বিক্রম-S উৎক্ষেপণ করে ভারতের বেসরকারি মহাকাশ গবেষণায় যে বিপ্লব শুরু হয়েছিল, বিক্রম-I তারই পরবর্তী ধাপ। তিন বছর আগে বেসরকারি খাতের জন্য মহাকাশ খোলা হয়েছিল; সেই উদ্যোগ আজ পূর্ণ গতিতে।

   

মোদীর বার্তা: মহাকাশে ‘গ্লোবাল লিডার’ হওয়ার পথে ভারত

উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, দেশের মহাকাশ খাতে আজ যেভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, তা ভারতের ‘বিশ্বাসযোগ্যতা, সক্ষমতা এবং মূল্যবোধের শক্তি’কে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরছে। তাঁর কথায়, “আমাদের তরুণ প্রজন্মের উদ্ভাবনী ক্ষমতা, ঝুঁকি নেওয়ার দুঃসাহস আর উদ্যোক্তা-মানসিকতা অভূতপূর্ব উচ্চতায় পৌঁছেছে। আগামী দিনে স্যাটেলাইট লঞ্চ ইকোসিস্টেমে ভারত বিশ্বনেতায় পরিণত হবে।”

তিনি গবেষণাকেও ভবিষ্যতের অগ্রগতির কেন্দ্রে রেখে বলেন, “ভারতের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বর্তমানের গবেষণায়।”

এই প্রেক্ষিতে মোদী উল্লেখ করেন-ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন, ওয়ান নেশন ওয়ান সাবস্ক্রিপশন প্রকল্প, এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল, যা তরুণ গবেষকদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে।

কী এই ‘ইনফিনিটি ক্যাম্পাস’?

স্কাইরুট অ্যারোস্পেসের নতুন ইনফিনিটি ক্যাম্পাস প্রায় ২ লক্ষ বর্গফুট জুড়ে তৈরি এক অত্যাধুনিক মহাকাশ কারখানা। এক জায়গায়—

রকেট ডিজাইন,

উন্নয়ন,

ইন্টিগ্রেশন,

ও টেস্টিং—

—এই চারটি পর্যায়ের সবকিছু সম্পূর্ণ করার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, সবই এখানে রয়েছে। কোম্পানির দাবি, এই ক্যাম্পাসে মাসে একটি অরবিটাল রকেট উৎপাদনের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে।

স্কাইরুটের প্রতিষ্ঠাতা পবন চন্দনা এবং ভারত ডাক্কা—উভয়েই আইআইটি-র প্রাক্তনী এবং ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী।

বিক্রম-I: কেমন এই নতুন রকেট?

ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জনক বিক্রম সারাভাইয়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে রকেটটি। ছোট স্যাটেলাইট বাজারকে লক্ষ্য করে তৈরি বিক্রম-I—

উচ্চতা: ২০ মিটার

ব্যাস: ১.৭ মিটার

থ্রাস্ট: ১,২০০ kN

বহনক্ষমতা: ৩০০–৩৫০ কেজি (LEO)

বডি: অল-কার্বন কম্পোজিট

মিশন টার্নঅ্যারাউন্ড: ২৪–৭২ ঘণ্টার মধ্যে লঞ্চ প্রস্তুত

একাধিক স্যাটেলাইটকে পৃথক কক্ষপথে স্থাপন করার জন্য রকেটটিতে রয়েছে রিস্টার্টেবল অরবিটাল অ্যাডজাস্টমেন্ট মডিউল।

চার ধাপের ইঞ্জিনিয়ারিং—Kalam সিরিজ ও Raman ইঞ্জিন

১ম ধাপ: Kalam-1200

দৈর্ঘ্য: ১০ মিটার

সলিড বুস্টার

থ্রাস্ট: ১২০ টন

সময়কাল: ৮০–১০০ সেকেন্ড

সাবমার্জড নোজল প্রযুক্তি ব্যবহার

২য় ধাপ: Kalam-250

সলিড মোটর

রকেটের মধ্য-উত্থান নিয়ন্ত্রণ করে

৩য় ধাপ: Kalam-100

ভ্যাকুয়াম অপারেশন

থ্রাস্ট: ১০০ kN

১০৮ সেকেন্ড জ্বলে

কার্বন অ্যাবলেটিভ নোজল ও EPDM তাপ-সুরক্ষা

৪র্থ ধাপ: Raman ইঞ্জিন ক্লাস্টার

৪টি তরল-জ্বালানির হাইপারগলিক ইঞ্জিন

MMH–NTO কম্বিনেশন

স্যাটেলাইট স্থাপনের সূক্ষ্ম কক্ষপথ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত

রকেটের কিছু অংশ 3D-প্রিন্টেড, যা ৫০% ওজন কমায় এবং ৮০% উৎপাদন সময় বাঁচায়।

কবে উৎক্ষেপণ হবে বিক্রম-I?

স্কাইরুট জানিয়েছে, ২০২৬ সালের শুরুতেই বিক্রম-I–এর প্রথম অরবিটাল ফ্লাইট পরিচালনার লক্ষ্য। রকেটটি, ডেডিকেটেড লঞ্চ, রাইডশেয়ার মিশন, এবং একাধিক কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন—সব ধরনের বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণ করবে।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular