‘অসময়ে’ রথযাত্রা নিয়ে এসজেটিএ-ইসকন বৈঠকে সমাধান অমিল

ISKCON (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) কর্তৃক বিদেশে ‘অসময়ে’ রথযাত্রা (Rath Yatra) আয়োজন নিয়ে উদ্ভূত বিতর্ক নিরসনের জন্য বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি।…

SJTA-ISKCON Talks Over 'Untimely' Rath Yatra

ISKCON (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) কর্তৃক বিদেশে ‘অসময়ে’ রথযাত্রা (Rath Yatra) আয়োজন নিয়ে উদ্ভূত বিতর্ক নিরসনের জন্য বৃহস্পতিবার ভুবনেশ্বরে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। এই বৈঠকটি পুরীর গজপতি মহারাজ দিব্য সিংহ দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসন (SJTA) এবং ইসকনের ধর্মীয় পণ্ডিতরা উপস্থিত ছিলেন। একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, এই বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

Also Read | অষ্টম বেতন কমিশনে ২.৮৬ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর কি সত্যিই বেতন বাড়াবে? জানুন সত্যি

   

বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল বিদেশে ইসকনের আয়োজিত ‘অসময়ে’ রথযাত্রা, যা কোটি কোটি জগন্নাথ ভক্তের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই আয়োজন শ্রী জগন্নাথ সংস্কৃতি এবং পুরীর ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার শাস্ত্রীয় সময়সূচির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বিবেচিত হচ্ছে। এই বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চললেও, এই বৈঠকের মাধ্যমে একটি সমাধানের আশা করা হয়েছিল। তবে, আলোচনা শেষে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।

বৈঠকের বিবরণ
গজপতি মহারাজ দিব্য সিংহ দেবের নেতৃত্বে এই বৈঠকটি শ্রী জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য রক্ষা এবং ভক্তদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে আয়োজিত হয়। এসজেটিএ-র প্রতিনিধিরা জানান, পুরীর রথযাত্রা একটি শাস্ত্রীয় এবং পবিত্র আচার, যা বৈদিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয়। এটি শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং জগন্নাথ ভক্তদের জন্য গভীর ধর্মীয় তাৎপর্য বহন করে। তবে, ইসকন বিদেশে ভিন্ন সময়ে এই রথযাত্রা আয়োজন করে, যা এসজেটিএ এবং ওড়িশার জগন্নাথ ভক্তদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

ইসকনের পণ্ডিতরা তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বলেন, বিদেশে রথযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে তারা শ্রী জগন্নাথের বার্তা এবং কৃষ্ণভক্তি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান। তারা যুক্তি দেন যে, এটি স্থানীয় সময় এবং সুবিধা অনুযায়ী করা হয় এবং এর মাধ্যমে জগন্নাথ সংস্কৃতি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। তবে, এসজেটিএ-র পণ্ডিতরা এই যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের মতে, শাস্ত্রীয় নিয়ম লঙ্ঘন করে এই ধরনের আয়োজন ভক্তদের বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান প্রকাশ করে।

বিতর্কের পটভূমি
ইসকন দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রথযাত্রা আয়োজন করে আসছে। আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে এই উৎসব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে, এই আয়োজনগুলো প্রায়শই পুরীর ঐতিহ্যবাহী সময়সূচি অনুসরণ করে না। এই বিষয়টি ওড়িশার জগন্নাথ ভক্তদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। গত বছরও এই নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, যখন ইসকনের একটি শাখা শীতকালে রথযাত্রা আয়োজন করেছিল, যা পুরীর শাস্ত্রীয় সময়ের সঙ্গে মেলেনি।

এসজেটিএ-র একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা এই বিষয়ে ইসকনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজকের বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা চাই জগন্নাথের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকুক এবং ভক্তদের অনুভূতির প্রতি সম্মান প্রদর্শিত হোক।” তিনি আরও বলেন, “এই বিতর্ক সমাধানের জন্য আমাদের আরও আলোচনার প্রয়োজন হবে।”

ইসকনের প্রতিক্রিয়া
ইসকনের একজন প্রতিনিধি বৈঠকের পর বলেন, “আমরা শ্রী জগন্নাথের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি প্রকাশ করি। বিদেশে রথযাত্রা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা তাঁর বার্তা বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাই না।” তবে, তিনি এও স্বীকার করেন যে, এই বিষয়ে এসজেটিএ-র সঙ্গে মতপার্থক্য রয়েছে এবং আরও আলোচনার প্রয়োজন।

ভক্তদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া
এই বিতর্ক জগন্নাথ ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে এসজেটিএ-র অবস্থানের সমর্থন করেছেন। একজন ভক্ত লিখেছেন, “রথযাত্রা আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের অংশ। এটি যেকোনো সময়ে আয়োজন করা যায় না। ইসকনের এই কাজ ভুল।” অন্যদিকে, কেউ কেউ ইসকনের পক্ষ নিয়ে বলেছেন, “বিদেশে জগন্নাথ সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে, এটি গর্বের বিষয়।”

আগামীর পথ
বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ায় এই বিতর্ক আপাতত অমীমাংসিত রয়ে গেছে। গজপতি মহারাজ দিব্য সিংহ দেব জানিয়েছেন, “আমরা শ্রী জগন্নাথের ঐতিহ্য রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এই বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।” এসজেটিএ এবং ইসকনের মধ্যে ভবিষ্যতে আরও বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, এই মুহূর্তে দুই পক্ষের মধ্যে মতৈক্যের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।

ইসকনের ‘অসময়ে’ রথযাত্রা নিয়ে এসজেটিএ-র সঙ্গে বিতর্ক শ্রী জগন্নাথ সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি সংঘাতকে তুলে ধরেছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠক কোনো সমাধানে না পৌঁছালেও, এটি এই বিষয়ে আরও আলোচনার পথ খুলে দিয়েছে। জগন্নাথ ভক্তদের অনুভূতি এবং ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান রক্ষার জন্য এই দুই সংগঠনের মধ্যে একটি সমঝোতা জরুরি। আগামী দিনে এই বিতর্ক কোন দিকে যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।