সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই হেফাজতে ছয় পুলিশকর্তা

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে (Supreme Court) কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগ, এই কর্মকর্তারা তাঁদেরই একজন…

Supreme Court ordered for CBI arrest

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে (Supreme Court) কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছে। অভিযোগ, এই কর্মকর্তারা তাঁদেরই একজন সহকর্মী কনস্টেবলের উপর ‘নৃশংস ও অমানবিক হেফাজতি নির্যাতন’ চালিয়েছেন।

সিবিআই-এর এফআইআরে কুপওয়ারার জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে কর্মরত তৎকালীন ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি) আইজাজ আহমদ নাইকো এবং পাঁচজন পুলিশ কর্মকর্তা—সাব-ইন্সপেক্টর রিয়াজ আহমদ, জাহাঙ্গির আহমদ, ইমতিয়াজ আহমদ, মোহাম্মদ ইউনিস এবং শাকির আহমদ—এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

   

এই ঘটনা ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটেছিল, যখন বারামুলায় কর্মরত কনস্টেবল খুরশিদ আহমদ চৌহানকে মাদক সংক্রান্ত একটি তদন্তের জন্য কুপওয়ারায় ডাকা হয়েছিল।২০২৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কুপওয়ারার ডিএসপি-র একটি সংকেতের মাধ্যমে খুরশিদকে সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশের (এসএসপি) কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।

অভিযোগ, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয় দিন ধরে তাঁকে কুপওয়ারার জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয় এবং নৃশংস নির্যাতনের শিকার করা হয়। সিবিআই-এর এফআইআর অনুযায়ী, খুরশিদের উপর লোহার রড, কাঠের লাঠি এবং বৈদ্যুতিক শক ব্যবহার করা হয়। তাঁর গোপনাঙ্গ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, লংকার গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং পায়ের তলায় ও নিতম্বে ব্যাপক আঘাত করা হয়।

২৬ ফেব্রুয়ারি তাঁকে গুরুতর অবস্থায় শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এসকেআইএমএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, খুরশিদের গোপনাঙ্গ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাঁর শরীরে একাধিক ফ্র্যাকচার এবং আঘাতের চিহ্ন ছিল।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিক্রম নাথ এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ এই ঘটনাকে ‘পুলিশি নৃশংসতার সবচেয়ে জঘন্য উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আদালত জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের দাবি খারিজ করে দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছিল খুরশিদ নিজেই আত্মহত্যার চেষ্টায় এই আঘাত পেয়েছেন।

আদালত বলেছে, “মেডিকেল প্রমাণ স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত করে যে এই ধরনের আঘাত নিজের দ্বারা সৃষ্ট হওয়া সম্ভব নয়।” খুরশিদের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই মামলা দায়ের করেছে, যিনি তাঁর স্বামীর উপর নির্যাতনের তদন্তের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে এসেছেন। সুপ্রিম কোর্ট জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনকে খুরশিদকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যা দোষী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আদায় করা হবে।

Advertisements

আদালত আরও নির্দেশ দিয়েছে, সিবিআই একটি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) গঠন করবে, যার নেতৃত্ব দেবেন সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। এই টিমকে ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। কুপওয়ারার জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টারের সিস্টেমিক সমস্যা, সিসিটিভি ফুটেজ, ফরেনসিক প্রমাণ এবং তদন্তের প্রক্রিয়া পর্যালোচনার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। খুরশিদের স্ত্রী যখন অভিযোগ দায়ের করতে চেয়েছিলেন, তখন স্থানীয় পুলিশ এবং এসএসপি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

উল্টে, খুরশিদের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টার অভিযোগে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়, যা সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করেছে। আদালত এই এফআইআরকে ‘দোষীদের রক্ষা করার জন্য দূষিত উদ্দেশ্যে’ দায়ের করা বলে উল্লেখ করেছে।

নাগোলে হৃদরোগে মৃত্যু তরুণের, বেঙ্গালুরুতে বাড়ছে সতর্কতামূলক চেকআপ

এই ঘটনা সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “পুলিশের দ্বারা পুলিশের উপর এমন নির্যাতন অকল্পনীয়। সিবিআই তদন্ত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।” এই মামলা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং হেফাজতি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে।