Six Militants Caught by Security Forces in Manipur
মণিপুরের (manipur) বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক অভিযানে শনিবার পুলিশ জানিয়েছে, ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার বিষ্ণুপুর, ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং কাংপোকপি জেলা থেকে জঙ্গিদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের মতে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন কাংলেই ইয়াওল কান্না লুপ (কেওয়াইকেএল/সোরেপা) নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয় সদস্য, যিনি চাঁদাবাজি এবং যুবকদের সংগঠনে নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
বিষ্ণুপুরের লেইমারাম মামাং লেইকাই থেকে গ্রেপ্তার হওয়া লেইচোমবাম পাকপি দেবী (৩৭) নামে এই জঙ্গির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কেওয়াইকেএল/সোরেপার হয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং নতুন সদস্য নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, তার কাছ থেকে উদ্ধার করা নথি এবং অন্যান্য প্রমাণ সংগঠনের কার্যকলাপ সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ করতে পারে।
উত্তরবঙ্গের জন্য ৭৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ কেন্দ্রের
অন্যান্য গ্রেপ্তারের মধ্যে
অন্যান্য গ্রেপ্তারের মধ্যে ইম্ফল (manipur) পূর্বের চেকন ক্রসিং এলাকা থেকে কাংলেইপাক কমিউনিস্ট পার্টি (কেসিপি-নয়ন) এর একজন সদস্য হুইদ্রোম সুন্দর সিং (৩৯) ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে মন্ত্রিপুখরি এলাকায় দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ পরিবহনের অভিযোগ রয়েছে। ইম্ফল পূর্বের উরুপ আওয়াং লেইকাই থেকে কেসিপি (পিডব্লিউজি) গোষ্ঠীর আরেক সদস্য এবং ইম্ফল পশ্চিমের লেই ইংখোল মানিং লেইকাই থেকে একই গোষ্ঠীর আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ইম্ফল পশ্চিমের ফায়েং সাবাল লেইকাই থেকে পিপলস রিভোলিউশনারি পার্টি অফ কাংলেইপাক (প্রিপাক-প্রো) এর একজন সদস্য অঙ্গোম সুরজিৎ সিং গ্রেপ্তার হন। এছাড়া, কাংপোকপি জেলার জাতীয় সড়ক ২-এ একটি ট্রাকের চালকের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় কেওয়াইকেএল-এর আরেকজন সক্রিয় সদস্যকে হাতেনাতে ধরা হয়। ইম্ফল পূর্বের লামলং বাজার থেকে আরেকজন জঙ্গি গ্রেপ্তার হন, যিনি কেওয়াইকেএল-এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।
অভিযানের বিশদ বিবরণ (manipur)
মণিপুর পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই অভিযানগুলি গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালনা করে। অভিযানের সময় পুলিশ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, নথি এবং অন্যান্য প্রমাণ উদ্ধার করেছে, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা রাজ্যের বিভিন্ন অংশে চাঁদাবাজি, অস্ত্র সংগ্রহ এবং জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই অভিযানগুলি রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং জঙ্গি কার্যকলাপ দমনের লক্ষ্যে চলমান প্রচেষ্টার অংশ।
বিষ্ণুপুরে গ্রেপ্তার পাকপি দেবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য
বিষ্ণুপুরে গ্রেপ্তার পাকপি দেবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ কেওয়াইকেএল/সোরেপার অন্যান্য সদস্যদের খোঁজে তল্লাশি জোরদার করেছে। ইম্ফল পূর্ব এবং পশ্চিমে গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোন এবং নথিগুলি তাদের নেটওয়ার্কের গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিতে পারে। কাংপোকপিতে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ জানায়, জঙ্গিরা জাতীয় সড়কে চাঁদাবাজির মাধ্যমে তাদের কার্যকলাপের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছিল।
মণিপুরে জঙ্গি কার্যকলাপের প্রেক্ষাপট
মণিপুরে (manipur) দীর্ঘদিন ধরে কেওয়াইকেএল, কেসিপি এবং প্রিপাক (প্রো)-এর মতো নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলি চাঁদাবাজি, অস্ত্র পাচার এবং স্থানীয় যুবকদের নিয়োগের মাধ্যমে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। গত কয়েক বছরে মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষ এবং অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে এই গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বিষ্ণুপুর এবং কাংপোকপির মতো জেলাগুলিতে জঙ্গিরা গ্রামীণ এলাকায় তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে।
ইম্ফল পূর্ব এবং পশ্চিমের মতো জনবহুল এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধির কারণে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী যৌথভাবে নজরদারি জোরদার করেছে। বিষ্ণুপুর এবং কাংপোকপির মতো জেলাগুলিতে গ্রামীণ এলাকায় জঙ্গি নেটওয়ার্ক ভাঙতে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, “আমরা জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। জনগণের কাছে আমাদের অনুরোধ, তারা যেন কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে।”
চলমান তদন্ত এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, এবং পুলিশ তাদের মাধ্যমে এই সংগঠনগুলির অন্যান্য সদস্য এবং তাদের অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে। পুলিশের তদন্তে এই গোষ্ঠীগুলির স্থানীয় ও আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে নতুন তথ্য উঠে আসতে পারে। এছাড়া, জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়াডিজিটাল প্রমাণ বিশ্লেষণ করে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মণিপুরে জঙ্গি কার্যকলাপ দমনে নিরাপত্তা বাহিনীর এই সাফল্য রাজ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে, এই গোষ্ঠীগুলির গভীরভাবে প্রোথিত নেটওয়ার্ক বিবেচনা করে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীকে দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাজ্যে জাতিগত সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। তবে, এই গ্রেপ্তারি রাজ্য সরকার এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকলে মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ আরও সুগম হবে।
এই ঘটনা রাজ্যের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তা বোধ জোরদার করতে পারে, তবে জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে আরও সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা আগামী দিনগুলিতে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং জনগণের সহযোগিতায় এই হুমকি মোকাবেলা করবে।