রাজধানী দিল্লি টানা চার দিনে তৃতীয়বার বোমাতঙ্কে (Delhi school bomb threat) কেঁপে উঠল। বৃহস্পতিবার সকালে নতুন করে রাজধানীর অন্তত ছ’টি স্কুলে ইমেল (Delhi school bomb threat) মারফত বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আসে। সকাল থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পড়ুয়া, শিক্ষক, অভিভাবক সকলের মধ্যে। দ্রুত স্কুল খালি করে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ, দমকল এবং বোমা নিষ্ক্রিয়কারী বাহিনী। যদিও এখনও পর্যন্ত কোথাও কোনও বিস্ফোরক বা সন্দেহজনক বস্তু মেলেনি। তবুও নিরাপত্তার বিষয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ।
একাধিক স্কুলে একযোগে হুমকি
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ৩৫ মিনিট ও ৭টা ৪৮ মিনিট নাগাদ দুটি আলাদা ইমেল আসে। ইমেলগুলিতে রাজধানীর ছয়টি নামী স্কুলকে টার্গেট করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রসাদ নগরের অন্ধ্রা স্কুল, বিজিএস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, রাও মান সিং স্কুল, কনভেন্ট স্কুল, ম্যাক্স ফোর্ট স্কুল এবং দোওয়ারকার ইন্দ্রপ্রস্থ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। খবর পেয়েই ছুটে আসে স্থানীয় পুলিশ, দমকল বাহিনী এবং বোম্ব স্কোয়াড। স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীদের দ্রুত বাইরে বের করে আনা হয়। আতঙ্কিত হয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকরা স্কুলগেটে ভিড় জমাতে শুরু করেন। অনেকেই সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন।
টানা তিন দিনের আতঙ্ক
প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার সকালে দিল্লির মালব্যনগর এবং করোল বাগের দুটি স্কুলে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি আসে। দিন গড়াতেই সেই সংখ্যা দুই থেকে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫০। যদিও পুলিশ সেই সমস্ত স্কুলের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেনি। তার আগেও সোমবার একইভাবে হুমকি ইমেল আসে কিছু স্কুলে। ফলে চার দিনের মধ্যে এ নিয়ে তৃতীয়বার রাজধানীতে স্কুলগুলিকে নিশানা করা হল। এই ঘটনাগুলি ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত ইমেল একই ধরনের হুমকি বার্তা বহন করছে। ফলে পুলিশের ধারণা, এর পিছনে একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। তদন্তে নামানো হয়েছে সাইবার সেল এবং বিশেষ গোয়েন্দা দল। ইমেল ট্রেস করার চেষ্টা চলছে। কারা এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাদের উদ্দেশ্য কী—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি, কোনও জঙ্গি সংগঠন এর সঙ্গে যুক্ত কি না, সেই দিকটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রশাসনের কড়া নজরদারি
ঘটনার পর থেকেই সমস্ত স্কুলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কড়া করা হয়েছে। মেটাল ডিটেক্টর, সিসিটিভি নজরদারি এবং স্কুল প্রাঙ্গণে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এবং পুলিশ কমিশনার আলাদা করে বৈঠক করেছেন। তাদের আশ্বাস, আতঙ্কের কিছু নেই, তবে সতর্ক থাকা জরুরি। অভিভাবকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে, গুজবে কান না দিতে।
আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
তবে সাধারণ মানুষ এবং অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক যে ক্রমেই বাড়ছে, তা বলাই বাহুল্য। পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠাতে অনেকেই ইতস্তত বোধ করছেন। হঠাৎ করে ক্লাস মাঝপথে বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার পরিবেশেও প্রভাব পড়ছে। বেশ কিছু স্কুল ইতিমধ্যেই অনলাইন ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে, যাতে পড়াশোনায় ক্ষতি না হয়।
পুলিশের বার্তা
পুলিশের দাবি, এখনও পর্যন্ত প্রতিটি হুমকি ইমেলই ফাঁকা প্রমাণিত হয়েছে। কোথাও কোনও বিস্ফোরক বা বিপজ্জনক বস্তু মেলেনি। তা সত্ত্বেও বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কারণ অজানা উৎস থেকে এই ধরনের ইমেল বারবার পাঠানো হলে সেটি নিছক মজা নাকি ষড়যন্ত্র—তা নিশ্চিত হওয়া জরুরি।