কলকাতা: তাঁদের থাকার মধ্যে রয়েছে শুধু দেশটুকু। এখন তাও প্রশ্নের মুখে! কাগজপত্রের গোলমাল কেড়ে নিতে পারে বাপ-দাদার ভিটে। বিশেষ নিবিড় সংশোধনের কল্যাণে বিহারের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ল ৬৫ লক্ষ মানুষের নাম। ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বুনিয়াদ হল প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটারাধিকার। যার দুটি মূল মানদণ্ড হল: ভোটাধিকার হবে সর্বজনীন এবং ভোটার তালিকা তৈরির দায় নির্বাচন কমিশনের, ব্যক্তি ভোটারের নয়।
তবে বর্তমানে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় সম্পূর্ণভাবে চাপিয়ে দিয়েছে আমজনতার উপর। এটি শুধুমাত্র অগণতান্ত্রিকই নয়, বরং অমানবিক। বন্ধ্যা জমিতে ফসল ফলাতে না পেরে আত্মহত্যার পরিবর্তে যে চাষি কোদাল-কাস্তে ফেলে পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে ভিনরাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যেতে বাধ্য হয়, নাগরিকত্ব প্রমাণের দায় কি তাঁর? রাষ্ট্র তাঁকে আদপে কি দিতে পেরেছে? কর্মসংস্থান? শিক্ষা? স্বাস্থ্য? বিচার? মাথায় রোদ-বৃষ্টি নিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নাম নথিভুক্ত করে সে ‘কাগজখানা’ সে পেয়েছিল, বর্তমানে সেটি ‘যথেষ্ট নয়’।
কোনও ব্যক্তি ভিনরাজ্যে স্থায়ীভাবে কাজ করতে চলে গেছে কিনা সেই বিষয়ে বিশদে তদন্ত হওয়া কি জরুরী নয়? মাত্র ৩০ দিনের মাথায় ৩৭ লক্ষ মানুষের বিষয়ে তড়িঘড়ি তদন্ত সেরে ফেলার ঘটনা উৎপীড়ন ছাড়া আর কি? যে রাজ্যের ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে এসআইআর সম্পর্কে কোনও গভীর ধারণাই নেই, তাতে নাম নথিভুক্তিকরণের জন্য ফর্ম জমা দেওয়ার কথা ত দূরস্ত! মাননীয় নির্বাচন কমিশন হুটোপাটি করতে গিয়ে হয়ত ভুলে যাচ্ছে যে নাগরিকত্ব হারানো মানুষদের কাছে নাগরিকত্ব-ব্যতীত আর কিছুই নেই।