শিলিগুড়িতে খোলা বাজারে বিকোচ্ছে ভারতীয় সেনার (Indian-Army) উর্দি। ভারতীয় সেনার উর্দি খোলা বাজারে তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে শিলিগুড়িতে জাকির হোসেন নামে এক দর্জিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুকনার সেনা গোয়েন্দা ইউনিট (আর্মি ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রবিবার জাকিরের দোকানে অভিযান চালায় এবং তাকে গ্রেপ্তার করে।
পরে তাকে ভক্তিনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনা জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, কারণ জাকির ভারতীয় সেনার সম্প্রতি প্রবর্তিত নতুন প্যাটার্ন ও ডিজাইনের উর্দি তৈরি করছিলেন, যা সাধারণত গোপনীয় রাখা হয়(Indian-Army)। পুলিশ ও সেনা সূত্রে জানা গেছে, জাকির হোসেন শিলিগুড়ির স্থানীয় বাজারে দর্জির কাজ করতেন।
এই ঘটনা শিলিগুড়িতে অতীতের একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০২৩ সালে, ভারতীয় সেনার গোয়েন্দা শাখা এবং ভক্তিনগর থানার পুলিশ যৌথভাবে একটি ভুয়ো সেনা নিয়োগ কেলেঙ্কারির পর্দাফাশ করেছিল(Indian-Army)। সেই সময় দলচাঁদ বর্মা নামে এক ব্যক্তি লেফটেন্যান্ট কর্নেল সেজে সেনায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন। তাকে সালুগাড়ার একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভারতীয় সেনার (Indian-Army) উর্দি তৈরি করে খোলা বাজারে বিক্রি করছিলেন। সুকনার সেনা গোয়েন্দা ইউনিট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তার দোকানে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় দেখা যায়, জাকিরের দোকানে ভারতীয় সেনার নতুন ডিজিটাল ক্যামোফ্লেজ প্যাটার্নের উর্দি তৈরি হচ্ছিল, যা ২০২২ সালে ভারতীয় সেনা প্রবর্তন করেছিল।
এই ডিজাইনের উর্দি সাধারণত সেনার অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য সীমাবদ্ধ এবং এর অপব্যবহার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেনা কর্মকর্তারা এই ঘটনায় হতবাক হয়েছেন, কারণ এই নতুন ডিজাইনের উর্দির বিস্তারিত তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর কথা নয়।
ভক্তিনগর থানার পুলিশ জানিয়েছে, (Indian-Army) জাকিরের দোকান থেকে একাধিক উর্দি, সেলাইয়ের সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জাকির এই উর্দিগুলো স্থানীয় বাজারে এবং সম্ভবত অন্যান্য এলাকায় বিক্রি করতেন।
পুলিশ এখন তদন্ত করছে, জাকির এই নতুন ডিজাইনের উর্দির নকশা কীভাবে পেলেন এবং এর পেছনে কোনো বৃহত্তর চক্রান্ত বা নেটওয়ার্ক জড়িত কিনা। সেনা গোয়েন্দা ইউনিট এবং শিলিগুড়ি মেট্রোপলিটন পুলিশ যৌথভাবে এই তদন্ত পরিচালনা করছে। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার শ্রী গৌরব শর্মা, আইপিএস, বলেন, “এটি একটি গুরুতর অপরাধ, যা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত।
আমরা সেনা (Indian-Army) গোয়েন্দা ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, জাকিরের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৭১ ধারায় (অন্যের পরিচয়ে প্রতারণা) এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এক মুখপাত্র বলেন, “শিলিগুড়ি পুলিশ এবং সেনার তৎপরতা প্রশংসনীয়। এই ধরনের অপরাধ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আমরা দ্রুত তদন্ত ও কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।” অন্যদিকে, বিজেপির এক নেতা বলেন, “এই ঘটনা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতাকে প্রকাশ করে। কীভাবে এই ধরনের গোপনীয় ডিজাইন বাজারে পৌঁছাল, তা তদন্ত করা দরকার।”
সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকে এই ধরনের কার্যকলাপকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলছেন। একজন নেটিজেন লিখেছেন, “ভারতীয় সেনার উর্দি জাতির গর্ব। এটির অপব্যবহার ক্ষমার অযোগ্য।”
নবগ্রাম থানায় হাজিরার নির্দেশ, কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ
শিলিগুড়ির অবস্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। এই অঞ্চলে নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এই ধরনের অপরাধ নিরাপত্তার দিক থেকে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। পুলিশ এখন জাকিরের সঙ্গে সম্পর্কিত সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক এবং এই উর্দিগুলো কারা কিনছিল তা খতিয়ে দেখছে। তদন্তে আরও কোনো ব্যক্তির জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায়নি।
এই ঘটনা শিলিগুড়ির পুলিশ এবং সেনা (Indian-Army) গোয়েন্দা ইউনিটের সমন্বিত প্রচেষ্টার প্রমাণ। তবে, জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা এবং সচেতনতার প্রয়োজন। আগামী দিনে তদন্ত কী দিকে এগোয় এবং এই ঘটনার পেছনে কোনো বৃহত্তর চক্রান্ত উন্মোচিত হয় কিনা, তা নিয়ে সকলের দৃষ্টি রয়েছে।