প্রশাসনিক প্রধানের বিরুদ্ধে বিজেপির সাম্প্রদায়িক মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া সিদ্দারামাইয়ার

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) মঙ্গলবার কলবুর্গি জেলার উপায়ুক্ত (ডিসি) ফৌজিয়া তরান্নুমের বিরুদ্ধে বিজেপি এমএলসি এন রবি কুমারের ‘পাকিস্তানি’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এই মন্তব্যকে…

siddaramaiah slams bjp on communal talk

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) মঙ্গলবার কলবুর্গি জেলার উপায়ুক্ত (ডিসি) ফৌজিয়া তরান্নুমের বিরুদ্ধে বিজেপি এমএলসি এন রবি কুমারের ‘পাকিস্তানি’ মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি এই মন্তব্যকে সমাজে “বিদ্বেষ সৃষ্টির” প্রয়াস হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে রবি কুমারের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে, যিনি বিধান পরিষদে বিরোধী দলের প্রধান চিফ হুইপ। এই মন্তব্য ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

সিদ্দারামাইয়া বলেন (siddaramaiah)

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (siddaramaiah) বলেন, “বিজেপি এমএলসি রবি কুমার যা বলেছেন, তা একেবারেই উপযুক্ত নয়। এটি সমাজে বিদ্বেষ সৃষ্টির একটি বিবৃতি। ফৌজিয়া তরান্নুমের (কলবুর্গি ডিসি) কিছু হবে না, তবে এটি সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

   

এর আগে, গত ২৪ মে বিজেপির ‘কলবুর্গি চলো’ প্রচারণার সময় একটি প্রতিবাদ সমাবেশে ফৌজিয়া তরান্নুমের বিরুদ্ধে রবি কুমারের কথিত মন্তব্যের জন্য কর্নাটক পুলিশ তার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। এফআইআরটি কলবুর্গির স্টেশন বাজার থানায় নথিবদ্ধ করা হয়।

রবি কুমারের মন্তব্য ও বিতর্ক

বিজেপির ‘কলবুর্গি চলো’ প্রচারণার অধীনে আয়োজিত সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় রবি কুমার জেলা প্রশাসনের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফৌজিয়া তরান্নুমের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “কলবুর্গি ডিসি অফিস তার স্বাধীনতা হারিয়েছে। ডিসি ম্যাডামও কংগ্রেসের কথা শোনেন। আমি জানি না, ডিসি পাকিস্তান থেকে এসেছেন, নাকি এখানকার আইএএস অফিসার।”

এই মন্তব্য প্রগতিশীল গোষ্ঠী, সুশীল সমাজ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। তারা এই মন্তব্যকে “অপমানজনক এবং সাম্প্রদায়িক” হিসেবে বর্ণনা করে রবি কুমারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানায়। কর্নাটক আইএএস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনার নিন্দা করে রবি কুমারের কাছে “নিঃশর্ত ক্ষমা” দাবি করে। তারা বলে, “ফৌজিয়া তরান্নুম একজন নিষ্কলঙ্ক সততার অধিকারী এবং অনবদ্য কাজের রেকর্ড সহ জনসেবায় গভীরভাবে নিবেদিত অফিসার।”

অ্যাসোসিয়েশন আরও বলে, “আমরা ফৌজিয়া তরান্নুমের সঙ্গে দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করছি এবং একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসারের খ্যাতি ক্ষুণ্ন করার এই প্রচেষ্টার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।”

ফৌজিয়া তরান্নুমের ভূমিকা

ফৌজিয়া তরান্নুম বর্তমানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কর্নাটক সরকারের অধীনে কলবুর্গি জেলার প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তবে, রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে তাঁর ভূমিকা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। তিনি রাষ্ট্রপতির দ্বারা সম্মানিত একজন আইএএস অফিসার, এবং তাঁর জনসেবার প্রতি নিষ্ঠা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত।

বিজেপির প্রতিবাদ ও রাজনৈতিক পটভূমি

বিজেপির প্রতিবাদ সমাবেশটি কর্নাটকের মন্ত্রী প্রিয়াঙ্ক খড়গেকে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের দাবিতে আয়োজিত হয়েছিল। এই দাবির পেছনে গত ২১ মে চিত্তাপুরে (প্রিয়াঙ্ক খড়গের বিধানসভা কেন্দ্র) একটি ঘটনা জড়িত, যেখানে কংগ্রেস কর্মীরা বিধান পরিষদে বিরোধী দলের নেতা চলবাদি নারায়ণস্বামীর অবস্থানরত একটি গেস্ট হাউসে অবরোধ সৃষ্টি করে বলে অভিযোগ। এই ঘটনা বিজেপি এবং কংগ্রেসের(siddaramaiah) মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।

Advertisements

বিজেপির সমাবেশে রবি কুমারের মন্তব্যকে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করেছে। কংগ্রেসের রাজ্য ইউনিট এক্স-এ একটি পোস্টে বলে, “একজন সম্মানিত আইএএস অফিসারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপবাদ দেওয়া বিজেপির সংস্কৃতির প্রতিফলন।” (siddaramaiah) তারা এই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করে এবং আইনি ব্যবস্থার দাবি জানায়।

জ্যোতি জানতেন ‘বন্ধুরা’ ISI-র লোক? ল্যাপলটের তথ্যে একের পর এক চমক

রবি কুমারের ক্ষমা ও কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া

বিতর্কের পর রবি কুমার তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তবে, কংগ্রেস তাঁর এই ক্ষমাকে “সাম্প্রদায়িক ও অগ্রহণযোগ্য” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার বলেন, “আইএএস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আজ সকালে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা এই ধরনের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।”

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এক্স-এ এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে রবি কুমারের মন্তব্যকে অফিসারদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের উদাহরণ হিসেবে দেখছেন। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “অফিসারদের ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে টার্গেট করা অগ্রহণযোগ্য এবং অস্বাস্থ্যকর রাজনৈতিক প্রথা।”

রাজনৈতিক প্রভাব

এই ঘটনা কর্নাটকে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করেছে। ফৌজিয়া তরান্নুমের বিরুদ্ধে মন্তব্যটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং প্রশাসনিক অফিসারদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছে। আইএএস অ্যাসোসিয়েশনের দৃঢ় অবস্থান এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিন্দা এই ঘটনার গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

রবি কুমারের মন্তব্য এবং তার ফলে সৃষ্ট বিতর্ক কর্নাটকের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ফৌজিয়া তরান্নুমের মতো একজন সম্মানিত অফিসারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক মন্তব্য নৈতিক ও আইনি প্রশ্ন তুলেছে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার (siddaramaiah) নিন্দা এবং এফআইআর দায়েরের মাধ্যমে সরকার এই ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তবে, এই ঘটনা রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং প্রশাসনিক নিরপেক্ষতার বিষয়ে বৃহত্তর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আগামী দিনে এই ঘটনা কর্নাটকের রাজনীতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট হবে।